‘এই ধরণের পরিস্থিতির শিকার আমাই জীবনে প্রথম হয়েছি। আমারও অনেক কিছু শেখার আছে। আমি তো কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করতে আসি নাই। আমরা করতে করতে শিখছি। সেক্ষেত্রে আমাদের ভুল হতেই পারে। ’
প্রতারণার অভিযোগে বেশ আলোচনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচিত মুখ রোবাইয়াত ফাতেমা তনি। অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানীতে কয়েকটি শোরুমে পোশাক এবং কসমেটিক্স বিক্রি করেন তিনি। সেখানকার এক ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর গুলশানে অবস্থিত প্রধান শোরুম ‘সানভীস বাই তনি’ সিলগালা করে দেয়। এর প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার (১৪ মে) গণমাধ্যমকে এমনটা বলেন তনি।
অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট লুবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, উনি অনেক ভালো একজন ক্রেতা। তার সঙ্গে আজ আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে একটি লাইভও করেছি। অভিযোগ করে তিনি নিজেই আপসেট হয়ে গেছেন, কারণ এরপর থেকেই মানুষ আমাকে নিয়ে এত এত রসালো নিউজ, বাজে কথা, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে চলছে ক্রমান্বয়ে। আমার থেকে বেশি তিনি এটা নিয়ে কষ্ট পেয়েছেন।
গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণের আগেই রসালো হেডলাইনে ভিউ বাড়ানোর জন্য নিউজ করা কতটা যৌক্তিক তা আমি জানি না। আমি সাধারণ কোনো ব্যবসায়ী হলে এত নিউজ হতো না। শুধুমাত্র আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড কথা বলি দেখে অনেকে আমাকে পছন্দ করে না, আবার আমাকে অনেকেই আইডল মানে। এখন কেউ আমাকে পছন্দ নাই করতে পারে, তাই বলে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা, এত বাজে এবং নোংরা কথা বলা এগুলোর যৌক্তিকতা আমি জানি না।
তিনি আরও বলেন, এমনও আমি দেখেছি কেউ কেউ বলেছে, উনি মনে হয় এই ব্যবসার আড়ালে দেহ ব্যবসা করেন। এখন আপনারাই বলেন, যে মানুষটা প্রায় ২৫০ জন কর্মী নিয়ে এত বড় প্রতিষ্ঠান চালায় তার কি আর দেহ ব্যবসা করার দরকার আছে? ফেসবুকে আসলে মানুষ কিছু চিন্তা করে লিখে না, মনে যা আসে তাই বলে দেয়। তাই বলে গণমাধ্যমও প্রতারণার অভিযোগ তুলে নিউজ বানালো, এতে আসলে আমার ইমেজ নষ্ট হয়েছে। আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতি তে পড়তে হয়েছে।
তনি জানান, অভিযোগকারী লুবনা আমাদের ব্যবসার ফেসবুক পেজে প্রথমে অভিযোগের কথা জানালেও আমার অফিসের স্টাফ রিপ্লাই দেননি। বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ায় আর অভিযোগের রিপ্লাই না আসায় লুবনা আপা ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় আমি বলব, আপনারা জানেন না, একটা ব্যবসায়িক পেজে ক্রেতাদের রিপ্লাই দিতে কতজন লোক কাজ করে। আমার এ ব্যবসায় ৫০ জন নিযুক্ত আছেন। যাদের একজন ডিউটিতে থাকা অবস্থায় আপার অভিযোগ গুরুত্ব দেননি। আর আমিও মালিক হিসেবে বিষয়টি জানি না।
তিনি আরও বলেন, এখন কোম্পানি যেহেতু আমার তাহলে আমার স্টাফ ভুল করলে সেটার দায়ভারও আমার উপর বর্তায়। অভিযোগকারী একজন শিক্ষিত মহিলা, একজন অ্যাডভোকেট। তিনি ভোক্তা অধিকারে আমার নামে অভিযোগ করেন। এর পরে ভোক্তা অধিকার থেকে শুনানির তারিখ জানিয়ে আমাকে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিটি আমার গুলশান ব্রাঞ্চের সেলসম্যানের হাতে দেয়া হয়, কিন্তু সে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে না পেরে সাধারণ চিঠি ভেবে রেখে দেয়। আমাকেও এই বিষয়টি জানানো হয়নি।
ভোক্তা অধিকারে যোগাযোগ না করার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি এবিষয়ে যেহেতু অবগতই ছিলাম না তাহলে আমি শুনানিতে যেতাম কিভাবে। আমি যদি জানতাম তবে অবশ্যই আমি যেতাম না হয় আমার কোন স্টাফকে সেখানে পাঠাতাম। আমরা তো কেউ আইনের বাইরে না। ভোক্তা অধিকার থেকে চিঠি এসেছে মানে আমাকে সেই শুনানিতে যেতেই হবে। আমি তো কোন অনৈতিক কাজ করছি না। এটা খুব সাধারণ ঘটনা, এমনটা হতেই পারে। এটি সমাধান করতে হবে।
তনি বলেন, ভোক্তা অধিকার যখন শোরুমে এসেছে তখন সেলসম্যান ঘাবড়িয়ে যায়। আমি ওইদিন ছিলাম রাজশাহী। তারা কোন ডকুমেন্ট পায়নি, সেকারণে তারা শোরুম সিলগালা করে বলে গেছে যে আপনারা পরবর্তীতে যোগাযোগ করে এ বিষয়টি সমাধান করেন।
তিনি আরও বলেন, এই ধরণের পরিস্থিতির শিকার আগে কখনও হয়নি, সেকারণে এটা আমার জন্যেও একটি বড় শিক্ষা। এখান থেকে আমারও অনেক কিছু শেখার আছে। আমি তো কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করতে আসি নাই। আমরা করতে করতে শিখছি। সেক্ষেত্রে আমাদের ভুল হতেই পারে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তনি বলেন, ভোক্তা অধিকারের কাউকে কি বলতে শুনছেন আমি গুলিস্তানের ড্রেস পাকিস্তানের বলে বিক্রি করেছি। অ্যাডভোকেট লুবনাও তার অভিযোগে এমন কিছুই বলেন নাই। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন যে সেলাই দেখে আমার সন্দেহ হয়েছে যে এটি অরিজিনাল পাকিস্তানি না। এখন সব ক্রেতাকে তো খুশি করা যায় না। ওনার মনে হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে গুলিস্তানের জামা কথাটা কোথা থেকে আসলো আমি জানি না। ভিউ বাড়ানোর জন্যে রসালো নিউজ করতে যেয়ে এমন করা টা কতটুকু যৌক্তিক তাও আমার বোধগম্য নয়।