লক্ষ্মীপুরে পেঁয়াজ চুরির অপবাদে এক ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্যকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পরে কথিত সালিশী বৈঠকের নামে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৮ মে) সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্যের নাম মো. ফারুক। তিনি নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার দশঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি দশঘরিয়া বাজারের মুদি দোকানদার স্থানীয় ৩ নম্বর পরকোট ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়। একই সঙ্গে লৌহার শিকল দিয়ে পা পিলারের সঙ্গে তালা দিয়ে আটকে রাখে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা মিলে ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, বাজারের বাবুলের দোকানের ১ কেজি পেঁয়াজ চুরির সময় দোকানের লোকজন চোরকে আটক করেছে বলে শুনেছি।
জানা গেছে, পোদ্দার বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে কথিত সালিশ বৈঠকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। স্বজনদের কাছ থেকে জরিমানা তাৎক্ষণিক আদায় করে নেন তারা। একই সঙ্গে এ ঘটনা নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করবে না মর্মে একটি মুচলেকা নিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে হারুনুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে জরিমানা আদায়ের বিষয়ে এড়িয়ে গেলেও মুচলেকা আদায়ের কথা স্বীকার করেন।
হারুনুর রশিদ আরও বলেন, বাজারের মসজিদ মার্কেট এলাকায় চারটি দোকানে পেঁয়াজ, রসুন চুরির সময় লোকজন তাকে আটক করে পিলারে বেঁধে রেখেছিল বলে শুনেছি। পরবর্তীতে খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে বাজারে এসে ব্যবস্থাপনা কমিটির অফিসে এনে আটক ব্যক্তিকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেই। তবে কার কার দোকানে চুরি করেছিল জানতে চাইলে তাদের নাম-পরিচয় কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
বাজারে বিদ্যুতের পিলারের সঙ্গে ৩ ঘণ্টা ধরে কথিত চোরকে বেঁধে রেখে নির্যাতনের ঘটনা এবং কথিত সালিশ বৈঠকের ঘটনা ঘটলেও পোদ্দার বাজার পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পের এসআই মাহবুবুর রহমান।
দশঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিমাকর্মী সোহাগ বলেন, ভুক্তভোগী মো. ফারুকের ছেলেরা বিদেশে থাকেন। তিনি এলাকায় সম্ভ্রান্ত লোক বলে পরিচিত। ব্যবসায়ী ফারুককে তার স্বজনরা নিয়ে চাটখিল শহরের হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। যতটুকু শুনেছি তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) তারেক বিন রশিদ কালবেলাকে বলেন, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে পুলিশকে বিস্তারিত জানাতে বলেছি। নির্যাতিত ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব। অভিযোগ না পেলে আমার কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।