মুখে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বললেও প্রেজেনটেশনে ভেসে উঠল যুদ্ধাপরাধের দায়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নাম। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ঘটেছে এমন ঘটনা। বিবিএসের প্রধান কার্যালয়ে ‘হাউসহোল্ড বেজড এনভায়রনমেন্টাল সার্ভে (এইচবিইএস) ২০২৪’ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণে তখন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশন দিচ্ছিলেন পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান
শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক সাদ্দাম হোসেন খান। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব ও বিবিএসের মহাপরিচালক। প্রেজেনটেশনের একপর্যায়ে একটি স্লাইডের মাঝে ভেসে ওঠে জামায়াতে ইসলামীর নাম। এমন ঘটনায় বিবিএসে এখন তোলপাড় চলছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত বুধবার সারা দেশ থেকে ৭২ জনকে এইচবিইএসের ওপর প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে প্রকল্প পরিচালক সাদ্দাম জরিপের প্রশ্নপত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছিলেন। প্রেজেনটেশনের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে একটি স্লাইডে একটি ছবির ওপরের অংশে লেখা ছিল ‘পরিবেশ সংরক্ষণ’ ঠিক এর নিচেই লেখা ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এমন ঘটনায় সেখানে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কর্মশালা শেষ হওয়ার পর এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন কালবেলাকে বলেন, ‘এটা তো আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ছিল। প্রেজেনটেশনে এত দ্রুত স্লাইড পরিবর্তন করা হয় যে, আমরা যারা মঞ্চে থাকি, তা সবসময় খেয়াল করা হয়ে ওঠে না। এই প্রথম এ বিষয়ে জানলাম। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে অবশ্যই খতিয়ে দেখব।’
সূত্র জানায়, মঞ্চে উপস্থিত সচিব, মহাপরিচালক ও অন্য অতিথিদের পেছনের মনিটরেও এ প্রেজেনটেশনটি দেখানো হয়। এ সময় অতিথিদের সামনে ঠিক সমান বড় আরেকটি মনিটর ছিল, যেখানে প্রেজেনটেশনটি একই সময়ে প্রদর্শিত হয়। প্রায় ২০ মিনিটের প্রেজেনটেশনের মাঝে একটি স্লাইডে জামায়েতে ইসলামীর নাম ভেসে ওঠে। তবে ওই সেশনের পর প্রকল্প কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের ইমেইলে যে প্রেজেনটেশন পাঠিয়েছেন, তাতে ওই ছবি সংবলিত স্লাইডটি ছিল না।
অবশ্য কালবেলার হাতে আসা ওই অনুষ্ঠানের মনিটর থেকে তোলা প্রেজেনটেশনের ছবি ও ভিডিওতে বিষয়টি স্পষ্ট দেখা গেছে।
জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক দলের নাম ভেসে উঠার সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে হাসির রোল পড়ে গেলেও স্লাইডটি দুই থেকে তিন মিনিট প্রদর্শিত হয়। পরে প্রকল্প পরিচালক ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মিজানুর বলেন, ‘এটা একটা পরিবেশবিষয়ক সার্ভের প্রশিক্ষণ ছিল, সেখানে রাজনৈতিক দলের নাম আসার কথা নয়। অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম, কিন্তু এরকম কিছু নজরে আসেনি। তবু যদি কিছু ঘটে, তবে তা খতিয়ে দেখব। যদি এরকম কিছু ঘটে থাকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
ওই প্রেজেনটেশন সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক সাদ্দাম হোসেন খান কালবেলাকে বলেন, ‘আমি আমার ব্যাচের মেধাতালিকার প্রথম স্থান অধিকারী কর্মকর্তা। পদোন্নতির সময় হয়ে এসেছে। সেখানে ঝামেলা সৃষ্টির জন্য হয়তো কেউ পাইরেট করে দিয়ে থাকবে। আমি জানি না এটা কীভাবে হলো। প্রেজেনটেশনটি সবার মাঝে বিতরণও করা হয়েছে।’