কয়েক বছর ধরে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ছেলেকে তার পিতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরির সম্ভাব্য প্রার্থী বলে ধারণা করা হচ্ছে। আয়াতুল্লাহ খামেনির ছেলে মোজতবা খামেনি ইরানের রাজনীতিতে অন্তরালের মানুষ হিসেবে পরিচিত। তবুও ইরানের অভ্যন্তরে তার রয়েছে শক্তিশালী প্রভাব। পর্দার পেছন থেকেই দীর্ঘদিন দেশের নীতি-নির্ধারণীতে ভূমিকা রেখেছেন মোজতবা খামেনি।
তবে শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন সেখানে বারবার এসেছে আরও একটি নাম। সেই নামটি হলো, ইরানের সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ‘ইব্রাহিম রাইসি’।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মোজতবা খামেনি ইরানের পরবর্তী নেতা হতে যাচ্ছেন সেই জল্পনা আরও বেড়েছে। অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতার অবসর এবং তার জায়গায় নতুন উত্তরসূরি আসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রবিবার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু শুধু নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সূচনা করবে না। এটি আয়াতুল্লাহ খামেনির স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের গতিশীলতাকেও পরিবর্তন করতে পারে।
ক্লেমসন ইউনিভার্সিটির লেকচারার আরাশ আজিজি বলেন, ২০০৯ সালের দিকে মানুষ সর্বপ্রথম মোজতবা খামেনিকে একজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে কথা বলতে শুরু করে। তখন আমি এটিকে একটি সস্তা গুজব বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন আর তেমনটা নয়। এটা এখন খুব স্পষ্ট, মোজতবা খামেনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি অসাধারণ কারণ তিনি জনসাধারণের চোখে প্রায় সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য ছিলেন।
আরাশ আজিজি আরও বলেন, ইরানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান অংশ প্রকাশ্যে মোজতবা খামেনিকে সমর্থন করতে শুরু করেছে।
৫৫ বছর বয়সী মোজতবা খামেনি আয়াতুল্লাহর আলি খামেনির ছয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র। তিনি একজন রক্ষণশীল হার্ড-লাইনার হিসেবে পরিচিত। মোজতবা খামেনি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রেরকরণিক এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যে বেড়ে ওঠেন এবং পরবর্তীতে শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এখন, তিনি তার বাবার অধিদপ্তর পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বলে মনে করা হয়।
তবে ইরানের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজের ছেলেকে উত্তরসূরি করবেন না। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে, মূলত ধর্মীয় নেতাদের একটি ছোট দল যারা ইরান পরিচালনা করে। নির্বাচিত কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন তারা।
কিন্তু ইসলামী প্রজাতন্ত্রের একটি মৌলিক নীতি ছিল, এটি বংশগত শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজের ছেলেকে উত্তরসূরি করলে তাতে মনে হতে পারে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনে গণতন্ত্র বজায় নেই এবং এখানে বংশানুক্রমিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
একজন ইরান বিশ্লেষক এবং আমওয়াজের সম্পাদক মোহাম্মদ আলি শাবানি বলেন, সর্বোচ্চ নেতা যদি বংশানুক্রমিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়, তার অর্থ কী? অর্থ হলো সিস্টেমটি মারা গেছে। তিনি মনে করেন, মানুষের কাছে এমন ধারণা তৈরি হোক আয়াতুল্লাহ খামেনি হয়ত তা চাইবেন না।
মোজতবা খামেনি কোমে অবস্থিত ইরানের সবচেয়ে বড় সেমিনারিতে পড়ান। তবে রাজনৈতিক কৌশলে তিনি অনেক পারদর্শী বলে মনে করা হয়। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ওপর তার বড় প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া ইরানের গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গেও তার রয়েছে গভীর যোগাযোগ। সর্বোপরী ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে মোজতবা খামেনির উচ্চস্তরের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
আয়াতুল্লাহ খামেনি তার ছেলেকে উত্তরাধিকার বিবেচনার তীব্র বিরোধী ছিলেন বলে বার্তা সংস্থা আইএলএনএকে বলেছেন সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনকারী বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্য আলেম মাহমুদ মোহাম্মদি আরাঘি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উত্তরাধিকার বিষয়ে আলোচনায় খামেনি এমন মনোভাব প্রকাশ করেন বলে জানান তিনি।
ইরানের নীতি অনুযায়ী, সর্বোচ্চ নেতার আসন শূন্য হলে বিশেষজ্ঞদের সমাবেশকে সর্বসম্মতিক্রমে সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করতে হবে। ততদিন পর্যন্ত তারা দেশ পরিচালনার জন্য তিন বা পাঁচ সদস্যের নেতৃত্ব পরিষদ বেছে নিতে পারবে।
ইব্রাহিম রাইসি আয়াতুল্লাহ খামেনির উত্তরসূরি হচ্ছেন বলে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তবে ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এখন আয়াতুল্লাহ খামেনির ছেলে মোজতবা খামেনিকেই সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসূরি বলে এগিয়ে রাখছেন বিশ্লেষকরা।