যশোরের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আছেন নানা ভোগান্তিতে। হাসপাতাল চত্বরে থাকা গভীর নলকূপটি নষ্ট দীর্ঘদিন। জেনারেটর থাকলেও সেটি চালু করা হয় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকতে হয় রোগীদের। এক বছর ধরে নেই অ্যাম্বুলেন্সের চালক।
বুধবার (২২ মে) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য রোগীদের দীর্ঘ লাইন। আর অন্তর্বিভাগে রোগীদের ভিড়। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, মেঝে, সিঁড়ি, বারান্দায় যত্রতত্র ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে। এমনকি রোগীদের বিছানার পাশেও আবর্জনা ভরা। পুরুষ ওয়ার্ডের উত্তর পাশের একটি শৌচাগারে পানি ভর্তি। শৌচাগারের দরজা খুললেই দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়া জাহানপুর গ্রামের আবদুল গণি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে ফ্যান-বাতি বন্ধ হয়ে যায়। তখন অসম্ভব কষ্ট হয়। ঝড়বৃষ্টি হলে মাঝেমধ্যে সারা রাত বিদ্যুৎ থাকে না। এ ছাড়া সমগ্র জায়গায় ময়লা আবর্জনা থাকে। পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার জন্য চিকিৎসা নিতে এসে আরও অসুস্থ হতে হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মজিবর রহমান জানান, হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানিরও সংকট আছে। হাসপাতালের ভেতরে গভীর নলকূপটি নষ্ট। পানি আনতে হয় দূর থেকে। নয়তো পানি কিনে খেতে হয়। তারা সরকারি হাসপাতালে আসেন অল্প খরচে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য। এখন যদি পানি কিনে খাওয়া লাগে, তাহলে কীভাবে হয়?
দীপ্ত চক্রবর্তী নামের এক যুবক জানান, সম্প্রতি তার এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ হয়ে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হওয়ায় তিনি জানতে পারেন, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের চালক নেই।
এ বিষয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেন, চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি এক বছর ধরে গ্যারেজে পড়ে আছে। কোনো গুরুতর রোগী থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার চালক অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে রোগী পৌঁছে দেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মনিরামপুর, সাতক্ষীরার কলারোয়া ও তালা উপজেলা থেকেও রোগী আসেন। হাসপাতালটি কমিউনিটি ক্লিনিক সেবায় একবার দেশসেরা, স্বাস্থ্যসেবায় একবার দ্বিতীয় ও দুবার তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, এক বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্সের চালক নেই। তার গাড়ির চালক দিয়ে জরুরি প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে। জেনারেটর আছে কিন্তু তেলের বরাদ্দ না থাকায় সেটি চালানো যায় না। গভীর নলকূপটিতে এক বছর ধরে পানি উঠছে না। অন্যদিকে ছয়জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিপরীতে মাত্র দুজন কর্মরত। তাদের দিয়ে পুরো হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন। এসব বিষয়ে তিনি আগেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন, আবারও বলবেন।