তখন হাতিয়াতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। বাড়িতে প্রসব বেদনায় ছটফট করছেন প্রসূতি। উপায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তীব্র ঝড়ো বাতাসের মধ্যেই প্রসূতিকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। সেসময় পুরো হাসপাতাল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। এমন পরিস্থিতিতে ডা. সুমাইয়া ইসলাম নামে এক চিকিৎসক নিজের মোবাইলের টর্চের আলোতে নরমাল ডেলিভারি করার মতো সাহস দেখান। সুস্থভাবে জন্ম হয় ২ নবজাতকের।
সোমবার (২৭ মে) রাতে ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই দুজন প্রসূতি তীব্র প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে আসলে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে এ ২ নবজাতক পৃথিবীর আলো দেখে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোর্শেদ লিটন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ না থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ফোনের আলো দিয়ে নরমাল ডেলিভারিতে দুই নবজাতকের জন্ম হয়েছে। বর্তমানে দুই মা ও নবজাতক উভয়েই সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষের জন্য নতুন করে ইউএনএফপিএর সাপোর্ট নিয়ে ‘প্রসূতি মায়ের সেবা’ আবার চালু হয়েছে। যার মাধ্যমে আমাদের মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। এ ছাড়া বিনামূল্যে সিজার অপারেশন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে হাতিয়ার জন্য ইউএনএফপিএর সাপোর্ট বিশাল আশীর্বাদ।
এ বিষয়ে ডা. সুমাইয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা মিডওয়াইফ মিম ও সাবরিনা জানান, চরকিং ইউনিয়ন থেকে রাত ১২টায় হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন ফ্যান্সি বেগম (৩০)। ঘূর্ণিঝড় রেমালের রাতে একটি ফুটফুটে কন্যা শিশুর জন্ম দেন তিনি। কিন্তু প্রসবের পর তার প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ শুরু হয়। হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ইউএনএফপিএর সাপোর্টে এবং পার্টনার্স ইন হেলথ ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত ডা. সুমাইয়া ইসলাম ও মিডওয়াইফ সাবরিনার আন্তরিক চেষ্টায় মায়ের সুস্থভাবে নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব হয়। সেই সঙ্গে ব্লাড ট্রান্সফিউশন এবং সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীর শক ও প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সক্ষম হন তারা।
তারা আরও জানান, দ্বিতীয় রোগী হাতিয়া উপজেলায় নিজ বাসায় ডেলিভারির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবস্ট্রাক্টেড লেবার নিয়ে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। রোগীর হিমোগ্লোবিন ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থাকায় জরুরি ভিত্তিতে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে ডা. সুমাইয়ার তত্ত্বাবধানে মিডওয়াইফ মিম এবং সাবরিনার সহযোগিতায় ওই রোগীরও স্বাভাবিক প্রসব করানো সম্ভব হয়। কিন্তু প্রসব পরবর্তীতে তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়। বর্তমানে দুই মা ও দুই শিশু সুস্থ আছে।
এ দিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে হাতিয়া উপজেলায় গত ২৬ মে রাত থেকে ইলেকট্রিসিটি ছিল না। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব চালছিল। প্রসূতি দুজনের অবস্থাই খারাপ ছিল। সব কিছু মিলিয়ে যে কী অবস্থা পার করেছি আল্লাহ ভালো জানেন। শেষে মোবাইল ফোনের টর্চের আলোর সহায়তায় দুজন মা ও শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছেন।’