32 C
Dhaka
Tuesday, October 22, 2024

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু

সৌদি আরবের আল নাজাদ অঞ্চলের আপিপ শহরে কাজে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বাংলাদেশি সময় দুপুর ১২টা ও সৌদি সময় আনুমানিক সকাল ৯টার দিকে আপিপ থেকে নির্মাণ কাজে যাওয়ার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- সবুজ চৌকিদার (৩৮), মো. সাব্বির (২১) ও মো. রিফাত (২০)। ঘটনার সময় তিন শ্রমিকের মধ্যে সবুজ গাড়ির চালক ছিলেন। নিহত শ্রমিকদের মধ্যে সবুজ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চর দুখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পশ্চিম বিশকাটালি গ্রামের জামাল চৌকিদারের ছেলে। অপর নিহত সাব্বির পার্শ্ববর্তী হাইমচর উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রামের সৈয়াল বাড়ীর মো. ইসমাইল সৈয়ালের ছেলে এবং রিফাত আলগী উত্তর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে নিহত তিন শ্রমিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম। কমলাপুর গ্রামের রিফাত মাত্র ৩ বছর আগে গিয়েছেন ওই দেশে। ভবন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার বাবা দেলোয়া হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাবার আবেদন ছিলে ছেলে যেন বাড়িতে এসে ঈদ করে। কিন্তু তা আর হলো না।

আরো পড়ুন  জুয়া খেলায় বাধা, তিন আন্দোলনকারীকে পিটিয়ে আহত

রিফাতের প্রতিবেশী আল-আমিন খান বলেন, রিফাত খুবই কমবয়সী। এমন দুর্ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। সান্ত্বনা দেয়ার মত কিছুই নেই। ছেলেটি তাদের সংসারের উপার্জনের হাল ধরেছিল।

সাব্বিরের মা ফাতেমা বেগম ছেলের শোকে কথাও বলতে পারছে না। অনেকটা বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিয়েও মাকে বুঝাতে পারছেন না। কিছু সময় পর পর ছেলের নাম নিয়ে কেঁদে উঠেন।

সাব্বিরের ছোট বোন স্নেহা বলেন, ভাই আমাকে ফোনে অনেক স্বপ্নের কথা বলতেন। দেশে আসলে কী কী করবেন। গত কয়েকদিন আগে কথা হলে আমি দেশে আসার জন্য বলি। কিন্তু ভাইয়ের আর আসা হলো না। দুই ভাইয়ের আমি ছোট। বড় ভাইও সৌদিতে থাকেন।

আরো পড়ুন  রিসোর্ট থেকে পর্যটকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

সাব্বির আর রিফাতকে সৌদিতে কাজের জন্য নিয়েছেন সবুজ চৌকিদার। তিনি তাদেরকে নিয়ে আপিপ শহর ও আশপাশের এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করতেন। নিজেদের গাড়িতে তারা কাজে আসা-যাওয়া করতেন। গাড়ির চালক ছিলেন সবুজ। দুর্ঘটনায়র সময়ও গাড়ির চালক ছিলেন সবুজ জানালেন তার বাবা জামাল চৌকিদার।

জামাল চৌকিদার বলেন, তার ছেলে সবুজ প্রায় ১৮ বছর সৌদিতে থাকেন। বেশ কয়েকবার দেশে এসেছেন। তার স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান আছে। তাদেরকেও ভ্রমণ ভিসায় কয়েকবার সৌদিতে নিয়েছেন। সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহ পূর্বে দেশ থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সৌদিতে নিয়েছেন। তারা এখন সৌদি আছেন।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি সময় ৪টায় সবুজসহ ৩ জনের দুর্ঘটনার খবর পাই। রাত ১০টায় সেখানে অবস্থানরত স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারি দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন  যদি মারা যাই, লোকে তোমাদের ‘শহীদের স্ত্রী-সন্তান’ বলে ডাকবে

এদিকে সবুজের মৃত্যুতে তার মা ও স্বজনরা শোকাহত। কারণ তার মৃত্যুতে ছেলের বউ ও নাতনিরা কেমন আছেন। তাদের কথা মনে করে কেঁদে উঠেন। তিনি বলেন, আমি আমার ছেলেকে নিজ চোখে এবং একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই।

এই তিন পরিবারের দাবি হচ্ছে-তাদের সন্তানদের মরদেহ দেশে নিয়ে আসার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যাতে সহযোগিতা করে।

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা জানান, সৌদিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। তবে আমাদের জানালে তাদের জন্য যেসব করণীয় আছে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

সর্বশেষ সংবাদ