ভারতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একটি মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম। অবশ্য হতাহতের সংখ্যা আরও কম বলেও জানাচ্ছে অনেকে। এদিকে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি রেল কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগেই এ দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে একাধিক তত্ত্ব উঠে আসছে।
ভারতীয় রেলকর্মীদের একাংশের মতে, দুর্ঘটনার কবলে পড়া মালবাহী ট্রেনের চালক সিগন্যাল মানেননি। সেই কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের লাইনে চলে এসেছিল ট্রেনটি। তবে কি এই দুর্ঘটনার নেপথ্যেও রয়েছে সিগন্যাল ‘বিভ্রাট’?
রেলের একটি সূত্র দাবি করেছে, সোমবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাঙাপানি এবং আলুয়াবাড়ি অংশের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ‘অকেজো’ ছিল। ফলে ওই অংশে খুবই ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করছিল। কখনও আবার ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেয়াও হচ্ছিল।
সোমবার সকাল ৮টা ২৭ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাঙাপানি স্টেশন ছেড়ে এগোনোর পরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বন্ধ থাকায় খুব ধীর গতিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চলছিল। ওই ট্রেনের জন্য ছিল বিশেষ কাগুজে ছাড়পত্র। রেলের পরিভাষায় যাকে ‘পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট’ (পিএলসিটি) বলে।
রেলের ওই সূত্রের দাবি, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ‘টিএ ৯১২’ ফর্ম দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চালাচ্ছিলেন চালক। ‘টিএ ৯১২’ কী? স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা খারাপ হয়ে গেলে ওই নির্দেশের ভিত্তিতেই ট্রেন চালিয়ে থাকেন চালক। সিগন্যাল লাল থাকলেও নিয়ন্ত্রিত গতিতে ট্রেন চালাতে পারবেন চালক।
রেল সূত্রের খবর, সকাল ৮টা ৪২ মিনিট নাগাদ রাঙাপানি স্টেশন থেকে ছাড়ে মালবাহী ট্রেনটি। তার পরই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনে সজোরে ধাক্কা মারে। খেলনাগাড়ির মতো মালবাহী ট্রেনের ওপর উঠে পড়ে এক্সপ্রেসের পেছনের দিকের একাধিক বগি। লাইনচ্যুত হয় অপর ট্রেনটিও। এতেই ঘটে হতাহতের ঘটনা।
প্রশ্ন উঠছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে যখন ম্যানুয়াল মেমো দেয়া হলো, তখন মালবাহী ট্রেনটি কীভাবে এগিয়ে গেল? সেটিকেও কি ছাড়পত্র দেয়া হয়েছিল? এ বিষয়ে রেলের ওই সূত্রের ব্যাখ্যা, ধরা যাক দুটি ট্রেনের চালককেই ম্যানুয়াল মেমো দেয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, ওই ছাড়পত্র থাকলে চালক ট্রেন ধীরে চালাবেন। ট্রেনের গতি কখনোই ঘণ্টা প্রতি ১০ কিলোমিটারের বেশি থাকবে না।
তা হলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মালবাহী ট্রেনের মধ্যে ১৫ মিনিটের ব্যবধান থাকার পরও কেন একই লাইনে কাছাকাছি চলে এলো দুটি ট্রেন? যদিও রেল কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
তবে এ বিষয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা সব্যসাচী দে বলেন,
এই বিষয়টা এখনও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এখনই এটা বলতে পারব না। আমাদের অগ্রাধিকার উদ্ধারকাজের পর পরিষেবা চালু করা। তদন্ত ছাড়া দুর্ঘটনার কারণ বলা সম্ভব নয়।