চলতি বছর হজ করতে গিয়ে মারা গেছেন এক হাজার ৩০১ হাজি। রোববার (২৩ জুন) এক বিবৃতিতে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সৌদি সরকার। কেন এত হাজির মৃত্যু হলো তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। এ জন্য তীব্র দাবদাহকে দায়ী করছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও স্যানিটেশন না থাকাকে দায়ী করছেন অনেকে।
সৌদি আরবে এবার পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে এক হাজারের বেশি হাজির মৃত্যু হয়েছে। যে সংখ্যা গেল হজে ছিল ২৫০ জনের মতো। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, হজ পালনে গিয়ে এ বছর মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫৮ জন মিশরের নাগরিক। ইন্দোনেশিয়া বলেছে, তাদের দেশের ২০০-এর বেশি নাগরিক মারা গেছেন, আর ৯৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ভারত।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৩৫ জন হাজি মারা গেছেন এ বছর। তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, জর্ডান, ইরান, সেনেগাল, তিউনিসিয়া, সুদান ও ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের নাম।
এবারের মৃত্যু নিয়ে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা না হলেও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেমে নেই। এতো বেশি হাজির মৃত্যুর জন্য প্রধানত তীব্র দাবদাহকে দায়ী করা হচ্ছে। এ বছর সৌদিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গেল হজ মৌসুমের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। মাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে হাজিদের মৃত্যুর সংখ্যা ৫ গুণ হয়েছে এ যুক্তি মানতে নারাজ অনেকে।
তাদের মতে, প্রচণ্ড এ তাপপ্রবাহে সৌদি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা হাজিদের জন্য পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে। এছাড়া হজের সময় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাজিদের লম্বা দূরত্বের পথ হাঁটতে হয়। তাও কমপক্ষে দিনে ১৫ কিলোমিটার। এতে তাদের হিটস্ট্রোকের পাশাপাশি দেখা দেয় নানা শারীরিক জটিলতা।
তবে সৌদি সরকার বিনামূল্যে অসংখ্য বোতল পানি বিতরণ করলেও এবার প্রয়োজনের সময় অনেক জায়গায় পানি মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। এতে তীব্র গরমে বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অনেকের মতে, প্রচণ্ড এ তাপপ্রবাহে সৌদি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা হাজিদের জন্য পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে। বিশ্লেষকদের মতে, হাজিদের উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও স্যানিটেশনব্যবস্থার তীব্র অভাব দেখা গেছে। তাঁবুগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় এবং পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত সুবিধার ঘাটতি ছিল।
যদিও হাজিদের কল্যাণে বরাদ্দ দেয়া নানা বিষয়ের কথা তুলে ধরছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, হাজিদের জন্য মোট ৬ হাজার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট ১৮৯টি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪০ হাজারের বেশি চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, প্রশাসনিক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেয়া হয়।
এছাড়াও পরিবহন সংকটের অভিযোগ করেছেন অনেক হাজি। অবশ্য সৌদি আরবের পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা হাজিদের যাতায়াতের জন্য ২৭ হাজার বাসের ব্যবস্থা রেখেছিল। অনেক হাজিই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পাননি বলে জানা গেছে। অনেকে বলছেন অ্যাম্বুলেন্স বা প্রাথমিক চিকিৎসা সহজে পাওয়ার উপায় ছিল না।
অনুমোদনহীন হজ সমস্যা এবার বেশি মৃত্যুর আরেকটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। যারা সঠিক কাগজপত্র ছাড়া হজ করেন তারা কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে চলেন।
একজন আরব কূটনীতিকের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, হজ পালনে গিয়ে এ মৌসুমে অন্তত ৬৫৮ মিশরীয় মারা গেছেন, যার মধ্যে ৬৩০ জনের হজ পারমিট ছিল না। মক্কায় মিশরীয় হজ যাত্রীদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে ১৬টি ট্র্যাভেল এজেন্সির লাইসেন্স প্রত্যাহার করে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধান আইন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে মিশরের কর্তৃপক্ষ।