দেশে সাধারণ মানুষের গড় আয়ুর তুলনায় স্বর্ণকাররা ১৩ বছর কম বাঁচেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
পুরান ঢাকার তাঁতি বাজারে শত শত অলিগলিতেই লুকিয়ে আছে এই শহরের হাজারো ঐতিহ্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানেই নিপুণ দক্ষতায় স্বর্ণালংকার তৈরি করছেন নূর মোহাম্মদ নবী। কোনো যন্ত্রপাতি নেই। ভরসা নিবিষ্ট চোখ আর হাতের নিখুঁত কারুকাজ। তবে এ পথচলায় সমস্যাও যে কম পোহাতে হয়নি।
নূর মোহাম্মদ নবী বলেন, কাজ করার সময় ফ্যান চালানো যায় না। গরমে কাজ করায় ঠাণ্ডা লাগে, জ্বর আসে। এছাড়া ধুলাবালিও ঢুকে। নূরের মতোই জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন অন্য কারিগররাও। তবে এ থেকে পরিত্রাণের যেনো নেই কোন উপায়।
অন্য কারিগররা জানান, সালফিউরিক অ্যাসিড হিট দিলে এটার থেকে ধোঁয়া হয়। যতই ঢেকে রাখা হয় ধোঁয়াটা আসবেই। অবশ্য এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া গ্যাসটা যখন যায় তখন বুক জ্বলে, কাশি হয়।
এই স্বর্ণ কারিগরদের নিয়ে একটি গবেষণা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের তথ্যে দেখা যায়, প্রতি ৪ জন কর্মকারের ৩ জনই ভুগছেন দুই বা ততোধিক অসংক্রামক রোগে। উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন ৬৫ ভাগ, ডায়াবেটিস আছে অর্ধেকের, হৃদরোগে ভোগেন ৩৫ আর কিডনি রোগে ২০ শতাংশ। কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বর্ণকারদের আয়ু কম হওয়ার পেছনে বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল যেমন দায়ী, একইভাবে দায়ী তাদের জীবনাচারও।
বিএসএমএমইউ এর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রোমেন রায়হান বলেন, স্বর্ণ কারিগররা যে পরিবেশে কাজ করেন সেই পরিবেশ উন্নত করা প্রয়োজন। ভেন্টিলেশনগুলো ব্যবস্থা করা। এছাড়া বেশি জনবলের মাঝে যে থাকছে এই বিষয়টিও চিন্তা করা দরকার। এর পাশাপাশি জীবনাচারেও পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন, অ্যালকোহল পান না করা, ধূমপান না করা। এর সঙ্গে ব্যায়ামও করতে হবে।
বিএসএমএমইউর গবেষণায় দেখা যায়, দেশের সাধারণ মানুষের গড় আয়ুর তুলনায় স্বর্ণকাররা ১৩ বছর কম বাঁচে।