মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের ভান্ডারীকান্দি গ্রাম, যা পাশের ক্রোকচরে গিয়ে শেষ হয়। নদটির অপর পাশে কৃষিজমি। অথচ এটি খাল দেখিয়ে খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম চোকদার।
একদিকে ফসলি জমি, অন্যদিকে আড়িয়াল খাঁ নদ। অথচ, এটিকে খাল দেখিয়ে সোয়া কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে। আর ফসলি জমির ওপর দিয়ে নামমাত্র খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় এতে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
এইরমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে থই থই করছে পানি। এটি আড়িয়াল খাঁ নদের একটি অংশ, যা ক্যামেরার লেন্সেও দৃশ্যমান। ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ১১ কিলোমিটার খাল খনন করার কথা। জাপান সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ বিভাগের আওতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
অভিযোগ আছে, নদকে খাল দেখিয়ে প্রকল্পে টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। নামমাত্র খনন করা হয়েছে, আর কৃষকের ফসলি জমির ওপর দিয়ে চালানো হয়েছে মাটিকাটা ভেকু মেশিনও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা।
এ বিষয়ে বিচার চেয়ে দুদক ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাহাদুর খাল, টেংরামারি খাল, ক্রোকচর খালসহ ৬টি খালের নামে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে সোয়া কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ও কমিটির লোকজন।
দক্ষিণ ক্রোকচরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মুন্সির স্ত্রী মাকসুদা বেগম বলেন, আমাদের এখানে কখনই কোনো খাল ছিল না। এটা আমরা নদ হিসেবেই জানি। এখানে খাল খননও করা হয়নি। আর নদের একটি অংশে আমাদের ফসলি জমি।
সেলিনা বেগম নামে একজন বাসিন্দা বলেন, আমাদের এলাকায় খাল নেই। এখানে ব্লকের মাধ্যমে ইরি ধানের চাষাবাদ হয়। এখানে কেউ খাল খনন করেনি। এখানে খাল খননের এমন কোনো খবর আমরা জানিও না।
মনির হোসেন নামে এক যুবক বলেন, আমাদের মালিকানা জায়গার ওপর দিয়ে খাল খনন করতে এসেছিল। পরে স্থানীয়রা সবাই বাধা দিয়েছে। এখানে খাল খননের দরকার নেই। এখানে ফসলি জমি। আর মূল কথা, এখানে কখনই খাল ছিল না।
ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফজলুর রহমান শিকদার বলেন, এখানে যে প্রজেক্ট দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণ রেকর্ডীয় মালিকানাধীন জমি। এই প্রকল্পে অধিকাংশ জায়গা খনন করা হয়নি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের পকেট ভারী হয়েছে, জনগণের কোনো উপকারই হয়নি।
ভান্ডারীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মোসলেম বেপারী বলেন, যতটুকু খাল খনন করা হয়েছে, সেটাতে আমাদের আরও ক্ষতি হয়েছে। এটা খাল খনন হয়নি, এটা রেকর্ডীয় সম্পত্তি খনন করেছে। মানুষের চাষি জমির ওপর দিয়ে ভেকু মেশিন চালিয়ে ক্ষতি করেছে।
ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার জোনায়েত হোসেন বলেন, খাল খননের প্রজেক্ট আসছে শুনেছি। খননের নামে শুধু রাস্তার পাশ দিয়ে নামমাত্রই ভেকু মেশিন চালাইছে। কীভাবে এই প্রকল্পে টাকা উত্তোলন করতেছে সেটাও আমরা বুঝি না। আমাদের দাবি, জনগণের স্বার্থে খাল খনন যেন, সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয়।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কথা হলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম চোকদার কালবেলাকে বলেন, আমরা সমিতির মাধ্যমে সঠিকভাবেই খাল খনন করেছি। এলাকার দুই একজন লোক বাজে মন্তব্য করছে। খাল খননের নামে কোনো ফসলি জমির ক্ষতি করিনি। জাইকার প্রকল্প সঠিকভাবেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কীর্তনীয়া বলেন, খাল খনন প্রকল্প করার সময় নকশায় ভুল ছিল। এটি সংশোধন করা না হলে আর কোনো বিল দেওয়া হবে না। এখন বর্ষা মৌসুম না গেলে আর খনন সুযোগ নেই। পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে, আর কোনো বিল দেওয়া হবে না।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, খাল খনন না করে বিল তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নদের জায়গায় প্রকল্প দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ গুরুতর অপরাধ। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।