চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। প্রভাবশালী মহলের এমন সিদ্ধান্তে অসহায় জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। পুলিশ বলছে, সমাজচ্যুত করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো জঘন্য অপরাধ।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করেন ভুক্তভোগীরা।
খবর নিয়ে জানা যায়, ছেঙ্গারচর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন। তিনি স্থানীয় মসজিদের ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২২ জুন তার ফেসবুকে একটি মতামত পোস্ট করেন। ওই পোস্টে কমেন্টস করে একই এলাকার আরও তিন পরিবারের সদস্য। ফেসবুকে মতামত পোস্ট করায় গত ২৯ জুন রাতে মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে চার পরিবারকে ওই প্রভাবশালীরা সমাজচ্যুত করেন।
এদিকে শিপন আহম্মেদ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা ফেসবুক আইডি থেকে সাইফুদ্দিনের ছবিসংবলিত ফটোকার্ড পোস্ট করে বলেন, সমাজ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে সমাজের লোকজন এই চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা ও চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও মানহানির বিচার চান পরিবারগুলো।
সাইফুদ্দিন বলেন, পৌর কাউন্সিলর সবুজ ব্যাপারী গেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তার যোগসাজশে আমাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমি ফেসবুকে কারও নাম নিয়ে পোস্ট করিনি। পোস্টে ছিল- মসজিদের ইমাম পালটানো যায়, ঘুষখোর আর সুদখোর পালটানো যায় না।
স্থানীয়রা জানান, জোড়খালী গ্রামের ব্যাপারী বাড়ির সাইফুদ্দিন, সরকার বাড়ির গোলাম নবী সরকার, জোবায়ের ও মানিক সরকারের চার পরিবারে ৩৯ সদস্যের বসবাস। সাইফুদ্দিনের পোস্টে মসজিদ কমিটির সম্মানহানি হয়েছে বলে এই সিদ্ধান্ত। এমনটা দাবি করছেন মসজিদ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজী। তিনি বলেন, ওই বৈঠকে গ্রামের ৮০ থেকে ১০০ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিল। তখন চার পরিবারকে সমাজ থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর সবুজ ব্যাপারী ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুই পরিবার ক্ষমা চেয়েছে। বাকি চার পরিবার ক্ষমা চাইলে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে গ্রামবাসী।
চাঁদপুর সনাকের সদস্য ও সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, একজনকে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সমাজ কাউকে বা সরকার কাউকে দেয় নাই। এটাকে যত দ্রুত নিবারণ করা যায় ততই মঙ্গল। সমাজচ্যুতের এই বিষয়টাকে প্রশাসন শক্তভাবে মোকাবিলা করা উচিত।
তিনি বলেন, মতলব উত্তর উপজেলায় এক দম্পতিকে সমাজচ্যুত করার ঘটনার রেশ না কাটতেই এমন আরও একটি ঘটনা জনমনে উদ্বিগ্ন সৃষ্টি করছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানা ওসি আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ইমামকে বিদায় দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। পরবর্তী ঘটনা জানা নাই। এই মাত্রই কয়েকজন বিষয়টি অবগত করল। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।