সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ‘৩৫ শিশু নিখোঁজ’-এর মতো কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
রোববার (৭ জুলাই) সংবাদমাধ্যমকে এ কথা বলেন তিনি।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বাচ্চা নিখোঁজের কোনো তথ্য নেই। প্রতিমাসে স্বাভাবিক নিখোঁজ থাকে, তবে চোখে পড়ার মতো না।’
তিনি বলেন, ‘এটি গুজবও হতে পারে। কারা গুজব ছড়াচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’
‘ব্রেকিং নিউজ! গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩৫টি বাচ্চা নিখোঁজ। সতর্ক থাকুন।’ কিংবা ‘গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩৫ বাচ্চা নিখোঁজ’–ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো এমন অসংখ্য পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এদিকে বেশ কয়েকটি বড় বড় ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩৫ বাচ্চা নিখোঁজ’-এর অসংখ্য পোস্ট। এসব নিখোঁজ সংবাদে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা।
শিশু-কিশোর হারানোর তথ্য ফেসবুকের যেসব গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে ছড়ানো হয়েছে তার বেশিরভাগই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাকেন্দ্রিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একের পর এক শিশু নিখোঁজের এমন ঘটনা অনেকাংশেই ভিত্তিহীন ও অসত্য। যারা হারিয়ে গেছে বলে পোস্ট দেয়া হয়েছিল, পরে তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া গেছে। সেটি পরে আর জানানো হচ্ছে না। নিখোঁজের সত্যতা যাচাই না করেই পোস্ট শেয়ার দিচ্ছেন নেটিজেনরা।
৮ জুন সকালে চান্দগাঁও এলাকায় আরাকান সড়কের একটি মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয় ৯ বছর বয়সী শাওয়াল শরীফ সাদমান। তার নিখোঁজের বিষয়টি জানাজানি হলে স্বজনরা ফেসবুকে চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করতে থাকেন। এ ঘটনায় আরাফাত উদ্দিন নামের একজন ডেসপারেটলি সিকিং চট্টগ্রাম নামের গ্রুপে পোস্ট করে শিশুটির সন্ধান চান। তবে ওইদিন রাতেই শিশুটিকে পাওয়া গেলেও তিনি সেই তথ্য আর জানাননি।
গুজব থেকে সচেতন হতে সাইদুজ্জামান অন্তর নামের একটি পেজ পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, ‘ফেসবুকে আপনারা অনেকেই নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্ট শেয়ার করছেন। যেগুলো শেয়ার করছেন তাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাইকে পাওয়া গেছে। নতুন করে দেখা যাচ্ছে অনেকে গ্রুপ বা পেজে শেয়ার করছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৩৫ নাকি কতজন নিখোঁজ, এটা পুরাই ভিত্তিহীন। অহেতুক গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। এটা কিন্তু সাইবার ক্রাইম। অনেকে সত্যটা না জেনে এরকম পোস্ট করে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছেন। সবাই এসব পোস্ট রিমুভ করুন।’
এমন নিখোঁজের খবরে আতঙ্কিত হয়ে ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করেন নাজমা হক নামের এক নারী। তিনি লিখেন, ‘হঠাৎ ছেলে-মেয়ে হারানোর পরিমাণ বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। বিষয়টি শঙ্কার। সবাইকে সাবধানে থাকার অনুরোধ করছি।’
একের পর এক শিশু নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার অতনু চক্রবর্তী বলেন, ‘এ ধরনের শিশু নিখোঁজের বহু পোস্ট আমাদের চোখে পড়েছে। তবে বিষয়টি গুজব মনে হচ্ছে। কারণ, এত শিশু নিখোঁজ হলে থানায় নিশ্চয় অভিযোগ আসত।’
না জেনে কোনো কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।