19 C
Dhaka
Thursday, December 12, 2024

আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পুলিশের তিন সদস্য

উত্তরায় ছোট কাপড়ের দোকানের ব্যবসা করতেন নয়ন মিয়া। তার এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল মো. জুয়েল রানা ও মো. সাইফুল ইসলামের বাড়ি। তৈরি পোশাকের ব্যবসার জন্য তারা নয়নের কাছে বিনিয়োগকারী নিয়ে আসতেন। কিন্তু বিনিয়োগ করা টাকা নিজেরা নিয়ে যেতেন। অন্যদিকে নয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক বিনিয়োগকারীদের দিতেন। এভাবে তারা এক বিনিয়োগকারীর দুই কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় করা মামলায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) দেওয়া চার্জশিটে তিন পুলিশ সদস্যের অর্থ আত্মসাতের কারসাজি উঠে এসেছে।

অভিযুক্তরা হলেন পুলিশ সদস্য মো. জুয়েল রানা, মো. সাইফুল ইসলাম ও ফেরদৌসী খাতুন। তাদের মধ্যে জুয়েল ও সাইফুল আপন ভাই এবং ফেরদৌসী জুয়েলের স্ত্রী।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিটিটিসির পরিদর্শক মো. মতলুবর রহমান কালবেলাকে বলেন, ব্যবসায়ে বিনিয়োগের ২-৩ দিনের মধ্যে লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন আসামিরা। বিনিয়োগে লাভ হয়েছে বলে জানাতেন। তারা যাতে বিনিয়োগ করে, সে জন্য উৎসাহিত করতেন। অর্থ আত্মসাৎ মামলায় তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন  সময় টিভির সম্প্রচার বন্ধ

এতে বলা হয়েছে, আসামি জুয়েল, সাইফুল ও ফেরদৌসী অপর আসামি নয়ন মিয়াকে দিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলায়। ভুক্তভোগী সেলিম মৃধা ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগে করলে জুয়েল, সাইফুল ও ফেরদৌসী নগদ টাকা নয়নের মাধ্যমে গ্রহণ করতেন। এ টাকার পরিবর্তে নয়নের কাছ থেকে চেক নিয়ে তারা ভুক্তভোগীকে দিতেন। ব্যবসায় লাভ হচ্ছে জানিয়ে ভুক্তভোগীকে কিছু টাকা দিত। পরে লাভের টাকাসহ তাকে পুনরায় বিনিয়োগ করাতেন ওই তিন পুলিশ সদস্য।

মূলত আসামি ভয় দেখিয়ে নয়নকে দিয়ে তারা এসব কাজ করাতো। জুয়েল ও সাইফুলের মামাতো ভাই রিপন নয়নের কাছে বিনিযোগ করা টাকার হিসাব রাখতেন। এইভাবে জুয়েল, সাইফুল, ফেরদৌসী ও নয়ন এ মামলার বাদী সেলিমসহ আরও ২০-২৫ জনের বিনিয়োগ করা টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আসামিরা সুকৌশলে বাদী সেলিমের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছে থেকে দুই কোটি ৬৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আসামি নয়ন মিয়াকে তাদের ভাগ্নে এবং বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ৩ পুলিশ সদস্য মানুষকে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করত। তাদের কথায় ২০২৩ সালের ২০ জুন সেলিম মৃধা তার স্ত্রী পারভীন বেগমের সামনে নগদ ৩১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা নয়নের হাতে দেন। পরদিন ২১ জুন রাতে জুয়েলকে নিয়ে নয়নের উত্তরার বাসায় গিয়ে সেলিম মৃধা নগদ ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেন। ২২ জুন আসামি নয়ন এজিবি কলোনির বাদীর বাসায় আসলে তার স্ত্রীর উপস্থিতিতে ৩৬ লাখ ২ হাজার টাকা দেন। ২৪ জুন জুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে বাদী ফের নয়নের উত্তরার বাসায় গিয়ে নগদ ৪৬ হাজার ১৯ হাজার টাকা দেন। ২৬ জুন কাকরাইল এসএ পরিবহনের সামনে নয়নের গাড়ির ড্রাইভার ফারুকের উপস্থিতিতে নগদ ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দেন। এর দুদিন পর ২৮ জুন মতিঝিল বাদীর বাসার নিচে নগদ ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা নয়নকে দেন। গত ১০ জুলাই রাতে বাদী তার বন্ধু খাজা মহিউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরায় ফের নয়নের বাসায় গিয়ে তাকে সাড়ে ৫২ লাখ টাকা দেন। এভাবে বাদী সরল বিশ্বাসে সর্বমোট ২ কোটি ৬৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা আসামিদের দেন।

আরো পড়ুন  ছাত্রদের ওপর গুলি : মামলা হচ্ছে নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে

এ টাকা দেওয়ার পর জামানত হিসাবে নয়নের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার চেক ও একটি তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে বাদীকে দেওয়া হয়। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ব্যবসার লাভের অংশ হিসেবে দুইবারে নগদ ২১ লাখ টাকা বাদীকে দেন আসামিরা। পরবর্তী আগস্ট মাস হতে নিয়মিতভাবে লাভের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কালক্ষেপণ করতে থাকে। সেপ্টেম্বর মাস পার হলে আসামিরা বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বাদী প্রতারণার শিকার হয়েছে বুঝতে পেরে তার মূল টাকা ফেরত চাইলে তিন আসামি পুলিশ সদস্য হওয়ায় বিভিন্নভাবে মন্ত্রণালয়ের কথা বলে ভয়ভীতিসহ বাদীকে খুন জখমের হুমকি দেন।

আরো পড়ুন  খামে ভরে ‘ঘুষের টাকা’ নিলেন ওসি, ভিডিও ভাইরাল

জানতে চাইলে বাদী সেলিম মৃধা বলেন, ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার চেক দিলেও টাকা তুলতে পারিনি। মামলা করেছিলাম, এখনো কোনো টাকা ফেরত পাইনি। মামলা তদন্তাধীন। আমি টাকা ফেরত চাই। প্রতারণা করা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত হোক এটাই প্রত্যাশা।

সর্বশেষ সংবাদ