24 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

বাবার প্রশ্নফাঁসের টাকায় মানবতার ফেরিওয়ালা!

বিভিন্ন চাকরির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় হঠাৎ আলোচনায় বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) একাধিক কর্মকর্তা এবং সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। নিম্নপদে থাকলেও বড় কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নফাঁসে যুক্ত থেকে আবেদ আলী হয়েছেন বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক। কামিয়েছেন শতকোটি টাকা। আর বাবার এসব অবৈধ টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করতেন ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। ছাত্রলীগ নেতা (সদ্য বহিষ্কৃত) সিয়াম আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষকে দানখয়রাত করে সেজেছিলেন মানবতার ফেরিওয়ালা। এরই মধ্যে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় এই বাবা-ছেলেসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুল রকমান মীরের ছেলে। জানা গেছে, আবেদ আলী হুট করে ডাসার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামলে বড় ছেলে সিয়ামও ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন। এর আগে বাবা-ছেলে এলাকায় যেতেন না। সিয়াম মিটিং-মিছিলে না গিয়েও ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ পান। জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের ম্যানেজ করে তিনি পদ বাগিয়ে নেন। রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকলেও এলাকায় বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন। তার এই পদ পাওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ অনিক বলেন, সৈয়দ সোহানুর রহমান ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তাকে ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে কোনো দিন পাইনি। নামে মাত্র পদে আছেন। জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের মাধ্যমে তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের পদ পেয়েছেন। আমরা কেউ তাকে নেতা বানাইনি।

আরো পড়ুন  মসজিদের সামনে থেকে শপিং ব্যাগে মোড়ানো নবজাতক উদ্ধার

সিয়াম পড়াশোনা করেছেন ভারতের শিলিগুড়িতে জি ডি গোয়েঙ্কা পাবলিক স্কুলে। ভারতে থাকার সময় নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি ভারত ছাত্রলীগের সভাপতি। সেটি নিয়ে তিনি তার পরিচিত মহলে দাপটও দেখাতেন। এরপর দেশে এসে ভর্তি হন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে। এলাকায় পদ থাকলেও তিনি ঢাকায় এসে হয়ে যান উত্তর মহানগর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক। প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করে সংগঠনটি।

আরো পড়ুন  আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২ শতাধিক

স্থানীয়রা জানান, বাবার টাকায় কেনা একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন সিয়াম। এসব গাড়ি নিয়ে তিনি এলাকায় ঘুরে বেড়ান। সেসব গাড়ি নিয়ে তিনি এলাকায় প্রায়ই যান। এলাকায় দান করে সেগুলোর ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে প্রচার করেন। কখনো হুট করে খেলার মাঠে উপস্থিত হয়ে ছেলেদের একটি ফুটবল দিয়ে দেন। কখনো রাস্তায় অসহায় মানুষকে পকেট থেকে বের করে টাকা দেন সিয়াম। গত কোরবানির ঈদে ১০০ মানুষকে ১ কেজি করে গরুর মাংস দিয়েছেন। বাবার অবৈধ টাকায় এসব দান তিনি করেন লোক দেখানোর জন্য। কারণ সেগুলো ভিডিও করার জন্য আবার তিনি লোক রেখেছেন। এসব দানের ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করে তিনি নিজেকে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচয় দেন। টাকার জোরে সব হয়, রাজনীতিও হবে—এসব কথা তিনি দম্ভ নিয়ে বলতেন।

আরো পড়ুন  কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরতে বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রশ্নফাঁসে বাবা-ছেলের জড়িত থাকা এবং অবৈধ সম্পদের খবরে এলাকার লোকজনের কাছে তাদের আসল পরিচয় ফাঁস হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন সিয়াম।

সর্বশেষ সংবাদ