২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বর্ধিত করহার এবং শুল্ক বিবেচনা করে একটি বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছে কোকা-কোলা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়েও। জানা যায়, বাংলাদেশের বাজারে কোকা-কোলার চাহিদা কমার ফলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কোমল পানীয়র ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর কমাতে ও অযৌক্তিক হারে পণ্যটির ওপর রাজস্ব না বসাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
সম্প্রতি ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজ লিমিটেড (সিসিবিবি) অধিগ্রহণ করে তুর্কি কোম্পানি কোকা-কোলা আইসেসেক (সিসিআই)। এছাড়া শিল্পের বিকাশের জন্য পরবর্তী সময়ে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
চিঠি সূত্রে জানা যায়, কোকা-কোলার পাশাপাশি স্প্রাইট, ফান্টা এবং কিনলে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ খাতে বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে এক হাজার ৭২ কোটি টাকা ও ২০২১-২২ অর্থবছরে এক হাজার ১৪৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে আনুমানিক এক হাজার ২২৫ কোটি টাকা। সবশেষ (২০২৩-২৪) অর্থবছরে পানীয় খাত থেকে রাজস্ব আদায় কমেছে। আগের বছরের তুলনায় যা প্রায় ২০ দশমিক ০১ শতাংশ কম।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পানীয় বিক্রির ওপর ৩ শতাংশ ন্যূনতম কর (যা আগে ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ) চালুর সঙ্গে বিদ্যমান মোট করহার বেড়ে হয়েছে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান কর বাড়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সরকারের রাজস্ব সংগ্রহকেও যা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে।
চিঠিতে বিডা জানায়, বর্তমান নিম্নমুখী ব্যবসায়িক অবস্থা বিবেচনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আগে আরোপিত ন্যূনতম কর ৩ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ না কমিয়ে বরং সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। এ করহার বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় পর্যায়ে মোট করহার হবে প্রায় ৫৩ শতাংশ। অন্য শিল্পের তুলনায় এ করহার সর্বোচ্চ। বাজেটে প্রস্তাবিত বর্ধিত করহার এবং শুল্ক বিবেচনা করে আগের বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছে সিসিআই। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এক্সিকিউটিভ ডেলিগেশনে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়। সেখানে পানীয় খাতের ব্যবসার ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে করহার কমাতে এবং সম্পূরক শুল্ক না বাড়াতে হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। চিঠিতে এ খাতের প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম কর এক শতাংশ করা ও সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে চিঠিতে বলা হয়, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যূনতম কর এবং সম্পূরক শুল্ক যৌক্তিক হারে নির্ধারণের ওপর আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানটির (সিসিআই) প্রস্তাবিত ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নির্ভর করছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অব্যাহত রাখতে কোকা-কোলা আইসেসেকের প্রস্তাব অনুযায়ী ন্যূনতম কর এবং সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে সুবিবেচনা করা প্রয়োজন।