কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নির্যাতনের সঠিক বিচার ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. মোস্তফা মিয়া। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এবং তার অনুসারী সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ হাসান খান, ছাত্রলীগ কর্মী শামীম রেজাসহ কয়েকজন। ফরহাদ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এবং শামীম সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী।
প্রক্টর বরাবর দেয়া ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সে সোমবার (৮ জুলাই) কোটা সংস্কারের দাবিতে রেলপথ অবরোধে অংশগ্রহণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে ফরহাদ তাকে কল করে ক্যাম্পাসে দেখা করতে বলে। তখন শঙ্কিত হয়ে বিষয়টি বিভাগের বড় ভাই আরিফ মাহমুদকে জানায় সে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) শহিদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে আরিফের সঙ্গে দেখা করে সে। সেখানে উপস্থিত হয় ছাত্রলীগ কর্মী ও একই বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম রেজা। তখন তাকে ফরহাদের ডাকার বিষয়টি জানায়।
একপর্যায়ে ফরহাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন শামীম এবং বলেন, ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসব নাকি?’ এরপর তাকে (মোস্তফাকে) টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যায়। সেখানে ফরহাদও উপস্থিত ছিলেন। সে প্রচন্ড গালিগালাজ করার পাশাপাশি শিবির আখ্যা দিয়ে মোস্তফাকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর রুম নিয়ে যায়। তখন বাবু তার ফোন চেক করতে শুরু করেন। ফোন চেক করে শিবিরের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না পেলেও ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট করা দেখে রেগে গিয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। মারার সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, স্বীকার কর।’ শিবিরের সঙ্গে ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই জানালেও দফায় দফায় মোস্তফাকে মারধর করেন তিনি। এ সময় বিভাগের বড় ভাই শামীমকে জড়িয়ে ধরলেও সে ধাক্কা দিয়ে সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দেয়।
লিখিত অভিযোগে মোস্তফা লিখেছেন, আমার পাশে পাঁচজন দাঁড়িয়ে আমাকে ঘিরে রাখে। আর বাবু ভাই লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এসময় ফারহাদ ভাই লাথি মারে, ঘুষি মারে। সেই সঙ্গে অন্যরাও লাথি ও ঘুষি মারতে থাকে। ৮ থেকে ১০ মিনিট মেরে কিছু সময় বিরতি নেয়, এরপর আবারও মারে। এভাবে দুই ঘণ্টার অধিক সময় আমার ওপর নির্যাতন চালায়। ফরহাদ ভাই আমাকে কানে কানে বলে―তুই শিবির করিস এটা স্বীকার কর, তাহলে ছেড়ে দেব।। আর তোর ডিপার্টমেন্টে কে কে শিবির করে এটা বল, ছেড়ে দেব। আমি তো নিজেও শিবির করি না, আর কে কে করে তাও জানি না। আমি তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি।
হল থেকেও তাকে বের করে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি লিখেছেন, মারধরের পর তারা আমাকে হল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। পরে বাবু ভাইয়ের একজন অনুসারী শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গণরুম থেকে আমাকে বের করে দেয়। এখন আমি ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছি। এ ঘটনার পর আমি খুবই শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি।
মারধরের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হাসান খানের মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি দুই থেকে তিন মিনিট পর কথা বলবেন বলে জানান। তবে পরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে ফোন কেটে দেন তিনি।
এছাড়া মারধরের ব্যাপারে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়েই কিছু জানেন না বলে জানান অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, ঘটনাটি আসলে আমি জানি না। দেখলাম অভিযোগে আমার নামও রয়েছে, আমি বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলে জানার চেষ্টা করছি। বিষয়টি আমার কাছে বানোয়াট মনে হচ্ছে। এটা অন্য কেউ করেছে কিনা সেটাও আমি জানি না। কিন্তু আমার যে নাম জড়ানো হয়েছে, এটাতে আমি খুবই অবাক হয়েছি।
অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, কয়েকজন মিলে আমাকে আজ অভিযোগটি দিতে এসেছিল। অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সহকারী প্রক্টরদের দায়িত্ব দিয়েছি।