29 C
Dhaka
Thursday, September 19, 2024

এক নার্সের এত ক্ষমতা! শাস্তি পেয়েও শোধরাননি

সরকারি চাকরি করলেও মানেন না সরকারি নিয়মকানুন। তোয়াক্কা করেন না মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ের শাস্তি পেয়েও শোধরাননি। মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তাদের বিরুদ্ধে তিনি নিয়মিতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন কুৎসিত ভাষায় লেখালেখি করেন। করেছেন নারীদের নিয়েও অশ্লীল মন্তব্য। সাইবার অপরাধের দায়ে আটক হয়ে জেলও খেটেছেন। তাকে সতর্ক করে ডজন খানেক নোটিশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। ঢাকা থেকে জামালপুরে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যোগদান করেননি। বরং মন্ত্রণালয়ের বদলির আদেশের বিরুদ্ধে উল্টো করেছেন আপিল। তাকে নিয়ে একই সঙ্গে বিপাকে মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ও স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদ। প্রচণ্ড প্রভাবশালী ও বেপরোয়া এই নার্সের নাম খান মো. গোলাম মোর্শেদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিনিয়র স্টাফ নার্স গোলাম মোর্শেদ চাকরি জীবনের শুরু থেকেই ছিলেন অনেকটা বেপরোয়া। নিজের খেয়াল খুশিমতো ডিউটি করতেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে চাকরি ফিরে পেলেও চরিত্র বদলায়নি তার। নিয়মিতই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করেন। যেসব ভাষায় তিনি লেখালেখি করেন, তা প্রকাশযোগ্য নয়। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরিহিত নারী সদস্যদের একটি ছবি জুড়ে দিয়ে এই মোর্শেদ অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এ জন্য তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল আটক করে। তবে জেল থেকে বের হয়েও আবার সেই একই পথে হাঁটেন গোলাম মোর্শেদ। ২০২২ সালে তাকে ঢাকা থেকে জামালপুরে বদলি করা হয়। তবে প্রভাবশালী এই নার্স নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে বদলির বিরুদ্ধেই আপিল করে। সেখানে তিনি অপ্রাসঙ্গিক শব্দ ব্যবহার করেন। ফলে ফের তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইস্যু করা সেই চিঠিতে বলা হয়, সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. গোলাম মোর্শেদের বদলি-সংক্রান্ত আপিল আবেদনের বক্তব্য ঔদ্ধত্যের শামিল বিধায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

আরো পড়ুন  যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী

এ ছাড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তাকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। একই বছরের ১২ অক্টোবর ও ৩১ অক্টোবর আবারও দুই দফায় নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশে গোলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ আনা হয়। নোটিশের ৪ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৯ মাস অভ্যাসগতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে কর্তব্যে অবহেলা প্রদর্শন সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ২(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’। তাকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ আরেকটি নোটিশ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন  কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরতে বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

চলতি বছরের ১০ মে গোলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশপ্রধান বরাবর একটি লিখিত আবেদন করা হয়। সেই আবেদনে বলা হয়, মো. গোলাম মোর্শেদ রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ পোস্ট ও মন্তব্য প্রচারের মাধ্যমে নার্সিং সেক্টরে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত রাখছেন। এ ধরনের অপকর্মের দায়ে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। তিনি এসব কর্মকাণ্ডের দায়ে একাধিকবার সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও স্থায়ী বরখাস্ত হন। কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় মোকদ্দমার মাধ্যমে চাকরি ফেরত পেলেও তার রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। সেইসঙ্গে নার্সিং সেক্টরের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও হুমকি প্রদর্শন করলে বনানী থানায় এবং শাহবাগ থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। সাধারণ নার্সরা এসব বিষয়ে বারবার অবহিত করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আরো পড়ুন  মৃত্যুর আগে ফেসবুক পোস্টে যা লেখেন সাংবাদিক সারাহ

জানতে চাইলে বিএনএ মহাসচিব মো. জামাল উদ্দিন বাদশা কালবেলাকে বলেন, ‘তিনি (গোলাম মোর্শেদ) দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করেন। উনার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে আমরা সব তথ্যপ্রমাণসহ ডিএমপি কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। এ ছাড়া স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদ (স্বানাপ) থেকেও গোলাম মোর্শেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’ একই কথা বলেছেন স্বানাপ সদস্য সচিব মো. আনিছুর রহমানও।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদকের ওপর উল্টো রেগে যান গোলাম মোর্শেদ। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে নিউজ করলে আপনার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা (সাইবার নিরাপত্তা) আইনে মামলা করব।’

সর্বশেষ সংবাদ