সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ইস্যুতে চলমান আন্দোলনে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। আজ থেকেই শিক্ষর্থীদের সঙ্গে তারা মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের বিষয়ে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন এ ঘোষণা দেন তিনি।
রাকিব বলেন,
চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের নামে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিংসাত্মকমূলক কটূক্তি করেছেন। তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
সেইসঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও সরকারি বাহিনীর হামলার অভিযোগ এতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ছাত্রদলের সভাপতি। সেইসঙ্গে সাংগঠনিকভাবে না থাকলেও ছাত্রদল রাজপথে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন রাকিব।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রদল মাঠে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজপথে থেকে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আজ থেকে মাঠে থাকবে ছাত্রদল।’
‘তবে ইস্যু ভিন্ন খাতে যেনো না যায়, তাই ছাত্রদলের ব্যানারে নয়, বরং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রদল কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকবে,’ যোগ করেন রাকিব।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কটূক্তি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার (১৭ জুলাই) দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করবে ছাত্রদল।
গত কয়েকদিন ধরেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থী। বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনাও।
আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। তখন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ।
কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত ৯ জুলাই আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।
দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
তবে আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা পাবে-এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় পর থেকেই ফেসবুকে ছড়াতে থাকে, ‘আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতি-নাতনি’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়ে রাতভর বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এরপর সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েক ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে।