‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কবলে যাতে না পড়ে সে জন্য আমার বাবা পোশাক ও আইডি কার্ড শপিং ব্যাগে ভরে বাসা থেকে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে বের হন। বাসা থেকে বের হওয়ার পর ডিএমপির কদমতলী থানা থেকে এসআই আলামিন মোবাইল ফোনে আমার বাবার মৃত্যুর খবর জানান। ওই পুলিশ অফিসার জানান, বিক্ষোভকারীরা বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই বাবার মৃত্যুর ঘটনা বলছিলেন নিহত এএসআই মোহাম্মদ মোক্তাদিরের ছেলে মাহফুজ রহমান তনয়।
তনয় বলেন, বাবার এমন আকস্মিক মৃত্যুর খবর পেয়ে আমার মা মোছা. নিরা আক্তার অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়েন। আমরা তাৎক্ষণিক কদমতলী থানায় ছুটে যাই। তার আগেই পুলিশ বাবার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে নিয়ে যায়।’
তনয় আরও বলেন, আমার বাবার ছবি মোবাইলে দেখে আমরা চিনতেই পারিনি যে এটা আমার বাবা। দুর্বৃত্তরা আমার বাবার মাথায় আঘাত করে খুলি তিন টুকরো করে ফেলে। আমার বাবাতো কোনো অপরাধ করেনি, নিরস্ত্র ছিল, কেন তাকে এভাবে হত্যা করল। আমার বাবা সবসময় মানুষের উপকার করতেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তার জীবনের শেষ ইচ্ছে ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমার বাবাকে হত্যা করে মাথা নিচের দিকে পা ওপর দিকে বেঁধে রাখল কেন? এভাবে মানুষ মানুষকে খুন করতে পারে? আমার বাবাকে মেরেই ফেললি তবে ওভারব্রিজে কেন ঝুলিয়ে রাখলে। আমার বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই।
পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ মোক্তাদির (৪৮) গত ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর মাকুয়াইলের বাসা থেকে পল্টন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্দেশে বের হন। পথিমধ্যে যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগ এলাকায় পৌঁছলে আন্দোলনকারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর তার মরদেহ রায়েরবাগ ফুট ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
মোক্তাদির ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়ন আংগারগাড়া গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর পুত্র। সাত ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। বাড়িতে একটি মাটির ঘর। পাশেই মাটি ভরাট করা হয়েছে নতুন বাড়ি করার জন্য। কিন্তু মোক্তাদিরের আর বাড়ি করা হলো না, বাড়িতে আসলেন লাশ হয়ে। এএসআই মোক্তাদিরকে ২১ জুলাই পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মোক্তাদির পরিবার নিয়ে ঢাকায় মাতুয়াইল এলাকায় থাকতেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে মাহফুজ রহমান তনয় বড়। তিনি উত্তরার একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তার মেয়ে স্থানীয় স্কুলে নালিহা তাবাসুম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।