ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা সরকার বলছে, গত তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এবার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। রাজ্যের এক মন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন আগস্ট মাসে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা স্বাভাবিকের থেকে ১৫১ শতাংশ বেশি।
ত্রিপুরার বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন অন্তত সাত জন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজ্য সরকার জানিয়েছে, গত চারদিন ধরে সেখানে প্রায় অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ সেখানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
রাজ্যের গোমতী জেলায় গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে ডম্বুর জলাধার। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, এই জেলায় অগাস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ১৯৬ দশমিক ৫ মিলিমিটার, অথচ বৃষ্টি হয়েছে ৬৫৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার। যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে ২৩৪ শতাংশ বেশি।
জানা গেছে, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও পানির নিচে। হাওড়া, খোয়াই, মুহুরী ও ঢলাইসহ রাজ্যের প্রায় সব নদী পানিই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান দপ্তর রাজ্যের তিনটি জেলায় ইতোমধ্যে লাল সতর্কতা ও বাকিগুলোতে কমলা সতর্কতা জারি করেছে।
রাজ্য সরকারের তথ্যমতে এই বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে গোমতী। এই জেলাতেই গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডম্বুর স্লুইস গেট খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। তবে রাজ্যের দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “যে প্রচারটা করা হচ্ছে ডম্বুর গেট খুলে দেয়া নিয়ে, সেটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু না।”
রতন লাল নাথ বলেন, “গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনও গেট খুলে দেয়া হয়নি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধারটির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৯৪ মিটার। পানির স্তর এর বেশি উঠলে নিজের থেকেই পানি গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। আর পানির স্তর নিচে নেমে গেলে নিজে থেকেই গেট বন্ধ হয়ে যাবে। পানির স্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে যেতেই এর দুইটি গেট দিয়ে পানি বেরোচ্ছে। এর মধ্যে একটি গেট দিয়ে ৫০% হারে পানি বেরোচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে আগে থেকেই মাইকিং করে সতর্ক থাকার অনুরোধও জানানো হয়েছিল।”
গত তিন দশকে ত্রিপুরায় এরকম বন্যা হয়নি দাবি করে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৩ সালের ২১শে অগাস্ট ত্রিপুরার সাব্রুমে একদিনে ২৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ছিল। এ বছর ২০ অগাস্ট একদিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩৭৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার। ঠিক ৩১ বছর পরে একদিনে এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পুরো মাসের হিসাব যদি দেখি, অগাস্ট মাসের ২১ দিনে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ২১৪ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৩৮ দশমিক ৭ মিলিমিটার, অর্থাৎ ১৫১ শতাংশ বেশি।”
এদিকে সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীতেও পানির স্তর বিপজ্জনক বলে জানা গেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় নদী বিশেষজ্ঞ এবং ওই অঞ্চলে পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে যুক্ত রাজ বসু বিবিসি বাংলাকে বলছেন, সিকিমে দুদিন আগে একটি বড়সড় ভূমিধসের ঘটনা হয়েছে, তবে নদী অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে না।
রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, গজলডোবা এবং কালীঝোড়া– তিস্তার ওপরে এই দুটি বাঁধে পানির স্তর স্বাভাবিক রয়েছে। ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গজলডোবা দিয়ে এক হাজার ৪৫ দশমিক ৯২ কিউমেক এবং কালীঝোড়া বাঁধ থেকে একই সময়ে এক হাজার ২৭ কিউমেক পানি ছাড়া হয়েছে বলে ।
অন্যদিকে ফারাক্কা ব্যারেজে নদীর পানির স্তর বুধবার থেকে কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে বলে ব্যারেজের সূত্রগুলো জানিয়েছে। কিন্তু পানির স্তর ঠিক কতটা বেড়েছে বা কটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারের ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।