20.7 C
Dhaka
Friday, November 22, 2024

সাগরে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২২ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে। রোববার (১৩ অক্টোবর) থেকে রোববার (৩ নভেম্বর) পর্যন্ত এ মোট ২২ দিন মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষে ইতোমধ্যে পোস্টারিং, ব্যানার, সচেতনতামূলক সভা ও মাইকিংয়ের কাজ সমাপ্ত করেছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা।

তিনি জানান, অবরোধ চলাকালীন সময় দু-একজন জেলের নিয়ম ভাঙার প্রবণতা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করেছি তারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধনধারী জেলেদের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৫ জন। অবরোধ চলাকালীন সময় এই জেলেদের জন্য বরাদ্দ সরকার প্রদত্ত ২৫কেজি চাল ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভায় পৌঁছে গেছে। শীঘ্রই এ চাল যথাযথভাবে জেলেদের মাঝে বণ্টন করা হবে। নিষেধাজ্ঞা পালনে উপজেলার মৎস্য বন্দর আলিপুর-মহিপুরের জেলেরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

আরো পড়ুন  অনুষ্ঠানে হারিয়ে গেল এমপির আইফোন ‘৪০ প্রো ম্যাক্স’!

জেলেরা জানায়, বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়াতে জেলেরা পড়বেন অস্তিত্ব সংকটে। একদিকে বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমেও সাগরে মাছের আকাল পড়েছে। ঋণের বোঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। ফলে পেশা বদলের উপক্রম এখানকার জেলেদের। দীর্ঘদিন কর্মহীন সময় পার করবেন তারা। তবে সরকার এই ২২ দিনের অবরোধের জন্য জেলে প্রতি ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে তা নামে মাত্র প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।

জেলে সোবহান জানান, ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এনজিওর ঋণ নিয়ে মানষিক দুশ্চিন্তায় আমার চোখে ঘুম আসে না। আর মহাজনের দাদনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব। এখন হতাশা হয়ে গিয়েছি। ২২ দিনের অবরোধে মাত্র ২৫ কেজি চাল যা দিয়ে এই কয়দিন সংসার চলে?

আরো পড়ুন  নিখোঁজের ৪ দিন পর দুই মাদরাসাছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার

মাঝি রফিক জানান, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৬০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ২২ দিনের অবরোধ আসলে এই ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা বোঝা আরও বেড়ে যাবে।

অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন প্রতি বছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায়না প্রশাসনের। তা না হলে আমাদের জালে চাহিদানুযায়ী মাছ ধরা পড়ত। সরকার দু’বছরের স্থলে বছরে একবারসহ ভারতের সময়সীমার সঙ্গে যেনো নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) দেওয়া হয়।

বাবা-মায়ের দোয়া ফিস পান্না হাওলাদার জানান, পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর ধরে বছরে দুবার নিষেধাজ্ঞা, বৈরী আবহাওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।

আরো পড়ুন  থানার ওয়াশ রুমে যেতেই রাসেলস ভাইপারের ছোবল, অতঃপর...

ট্রলারের মালিক কামাল জানান, জমিজমা বিক্রি করে দুইটা ট্রলার তৈরি করেছি। এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। বর্তমানে এই ট্রলার বিক্রি করে মানুষের ধারদেনা দিয়েছি। এখন মাছের ব্যবসা ছেড়ে নিজের অল্প কিছু জমি আছে তাতে কৃষিকাজ করি।

মহিপুর আড়তদার মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ রাজা বলেন, সরকার সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও জেলেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তবে সেটা যদি মৎস্য পেশাকে নিশ্চিহ্ন করে তাহলে অতি সম্প্রতি এই পেশায় সংকট দেখা দিবে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন সময় এখনো থেকে দেড় মাস বাকি। তাই আমাদের দাবি এই অবরোধ পিছিয়ে দেওয়া হোক।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জেলেদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জেলেদের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও চলছে।

সর্বশেষ সংবাদ