23 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শুধু সরকার পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই বদলায়নি দাবি গয়েশ্বরের

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মন্তব্য করেন, আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আমাদের আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এ কারণে আমি বলেছি, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সরকার বদলেছে কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।

রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এক-এগারোর সময়ে আওয়ামী লীগের সব মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তাহলে এখন কেন আমাদের মামলা উঠছে না। আপনারাই বলেছেন, আমাদের ওপরে মিথ্যা মামলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করার কারণে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপরে এত অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেন আপনাদের বিবেচনায় আসছে না। আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথিত ও সোচ্চার হতে পারি, তাহলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আমাদের আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এ কারণে আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।

বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মান্না দে’র একটি গান… তুমি কি সেই আগের মতোই আছ, নাকি অনেক খানি বদলে গেছ… । গানের শুরুটা এরকম যদি বলি… সরকার বদলিয়ে গেছে, তুমি-আমি একই আছি, আগে যা ছিলাম…। বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় নাই। মানুষের জন্যে, অধিকারের জন্যে দীর্ঘ ১৬ বছর যারা রক্ত দিয়েছে, যারা গুম, সন্তান হারা, পিতৃহারা হয়েছে এবং যারা মা হারা হয়েছে- এরা প্রকৃতপক্ষে সব হারিয়েছে। মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই। সব আগের মতোই আছে।

আরো পড়ুন  ব্রিটিশ ভারত থেকে বাংলাদেশ, চার দফায় যেভাবে নিষিদ্ধ হয় জামায়াত

জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ‘দুর্যোগ প্রশমনে বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের সহসভাপতি রুহুল আমিন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির কর্মকাণ্ডের ওপরে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।

‘নির্বাচন হবে কিনা কিভাবে বিশ্বাস করব’ এমন প্রশ্ন করে গয়েশ্বর বলেন, এখনো নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেননি। কিন্তু জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। যেখানে এখনো উইথআউট নির্বাচন কমিশন সেখানে আমি কিভাবে বিশ্বাস করব আপনি নির্বাচন করবেন…? কমিশনের পর কমিশন… আরেকটা কমিশন হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা। জাস্ট ইজ এ টাইম কিলিং, নাথিং মোর। নির্বাচন যত শিগগির হবে জনগণের পার্টিসিপেশনের জোয়ারের রায়ের মধ্যে হবে। এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচনের অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে জনগণ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবে, কিন্তু মরা মানুষ উপস্থিত হবে না।

২০০৭ সালে এক-এগারোর ঘটনা প্রবাহের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক-এগারোর যে বিরাজনীতিকরণ বা রাজনীতিবিদদের অপসারণ করা বা রাজনীতি অঙ্গন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া…তখন রাষ্ট্র শক্তি গ্রহণ করা সংস্কারের নামে কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে এগুলো অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে বাস্তবরূপ এখনো সংস্কার শব্দ ঘুরছে। আজকে ১৬ বছর পর জনগণের একটা দাবি… একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। একই সময়ে সেই নির্বাচনের জন্য যে এত রক্ত দিল…সব কিছু করল… আজকে আপনাদের সেই যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা, ভোটাধিকার, স্বাধীন ভোট… যাকে খুশি তাকে দিব… অন্য কোনো দাবি নাই। জাস্ট আপনি একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবেন সুন্দর করে।

আরো পড়ুন  সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে ওবায়দুল কাদের

‘ছাত্র-জনতার আন্দোলন ভোটাধিকারের’ উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, আজকে যে আকাঙক্ষা কোটা বৈষম্যবিরোধী থেকে শুরু করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাবার যে আন্দোলনটা সে আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো সাংঘর্ষিক না। সবাই একই ধারার আন্দোলন। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের (ছাত্রদের) আলাদা করতে চান কেন?

ছাত্ররা সচিবালয় ঘেরাও করবে কেন… কিছু থাকলে তারা সমাবেশ করে সরকারকে সতর্ক করবে। আন্দোলন শেষ আমরা তো চলে গেছি… আমাদের কেউ ডাকে নাই। ১৯৬২ সালে আমি ক্লাস এইটের ছাত্র, তখন থেকে শিক্ষা আন্দোলনে ছিলাম… তখন থেকে রাজনীতি করছি। আমি বলব, তাই ছাত্রদের আলাদা করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। বৈষম্যবিরোধী যদি আরেকটা বৈষম্য সৃষ্টি হয় তার মাসুল কে দেবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার দায়িত্ব একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু রিফর্ম দরকার হয় সেটুকু রিফর্মের জন্য বিবেচনা করবেন। আর আপনাদের ভাবনাগুলো আর আমাদের ভাবনাগুলো… আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি… এসব সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে… জনগণের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আসবে, তারা ঐক্যমতের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করবে। আমরা বলছি, আপনারা যদি ব্যর্থ হন জাতি ব্যর্থ হবে। আপনারা ব্যর্থ হওয়া মানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল ব্যর্থ হওয়া। আমরা দেখতে চাই, আপনারা সফল হন। আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি… আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেব। মানুষের তরে স্পষ্ট করেন আপনারা নির্বাচন করবেন।

আরো পড়ুন  যে কারণে ডিবিতে গিয়েছিলেন মামুনুল হক

নির্বাচনে কত সময় লাগবে বলুন প্রশ্ন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, নির্বাচনের জন্য কতটুকু সময় লাগবে বলেন না কেন? সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন ১৮ মাস… তার কথা বলেছেন বলুক। পরের দিন কেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সরকারের কথা না। তাহলে সরকারের কথাটা কি? ৩৬ মাস, ৩০ মাস- তাই বলেন না… বলতে তো হবে আপনাকে। আপনাকে তো সময় বলতে হবে। কোনো বিয়ে ঠিক হলে ৩ মাস আগে তারিখ ঠিক হয়…। আমি যদি জানতে পারি আপনারা এত মাস পরে নির্বাচন করবেন আমাদের তো কাজ আছে… আমাকে জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের বুঝাতে চেষ্টা করব… আমি এই করব, সেই করব… আমি তো একটা রাজনৈতিক দল করি… আমাদেরও তো আকাঙ্ক্ষা আছে জনগণকে কনভিন্স করা। সুতরাং আপনাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে।

সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হকসহ জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ সংবাদ