সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি-পরীক্ষা আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত করার বিষয়ে নেওয়া প্রাথমিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে পরীক্ষার সময়সূচি পেছানো ও আবেদন ফি হ্রাসের দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাবি শাখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ তাদের এই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন শাওন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আক্তার শুভ ও সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আলম ভূঁইয়া ইমন উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ অক্টোবর বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় যে, ওই তারিখে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির মিটিং-এ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষা অতিদ্রুত আগামী ডিসেম্বর মাসেই অনুষ্ঠিত করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফল প্রকাশের মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ভর্তি-পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অন্যান্য স্তরের শিক্ষার্থীদের মতো ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এসব শিক্ষার্থীর অনেকে এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী চিরতরে পঙ্গু ও মারাত্মকভাবে আহত হয়ে এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী অপশক্তি যে সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা অন্যদের মতো এসব শিক্ষার্থীকেও মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত করেছে। এছাড়াও গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এসব শিক্ষার্থীই ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, যে কারণে তাদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরতে বেশ কিছু সময় লেগে গেছে। ডিসেম্বর মাসে ভর্তি-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের বৃহদাংশই এতে অংশগ্রহণের সুযোগ হতে বঞ্চিত হবেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-পরীক্ষার মতো প্রতিযোগিতামূলক একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সাধারণত একটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি গ্রহণের যে সময় পেয়ে থাকে, আগামী ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়কাল সে তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাবে- এই বিষয়টিও তাদের মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, ভর্তি পরীক্ষার সময়সীমা যৌক্তিকভাবে পেছানো হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা তাদের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাবেন এবং আহত শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এতে অংশ নিতে পারবেন।
শিক্ষার্থীদের কল্যাণবিরোধী এবং শিক্ষার্থী নির্যাতন-নিপীড়নের মদদদাতা পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের তল্পিবাহী বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ৫ বছরের ব্যবধানে ভর্তি-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন ফি শতকরা ২০০ ভাগ বাড়িয়ে ১০৫০ টাকা নির্ধারণ করে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের অনেকের পক্ষেই এই পরিমাণ আবেদন ফি প্রদান করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং, পরিস্থিতি বিবেচনায় ভর্তি-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন ফি যথাসম্ভব হ্রাস করা এখন সময়ের দাবি।