19 C
Dhaka
Thursday, December 5, 2024

সংকটে পাকিস্তানের গাধা ব্যবসায়ীরা | কালবেলা

একসময় পাকিস্তানের বাণিজ্যিক কেন্দ্র করাচির সড়কগুলো গাধার ডাকেই মুখরিত থাকত, কিন্তু এখন বেড়ে চলা খরচ এবং নগরায়ণের কারণে গাধার ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে।

গাধায় টানা গাড়িগুলো দক্ষিণ করাচির পাইকারি বাজারগুলোর জন্য পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শহরের অপ্রশস্ত সড়কগুলোতে সাধারণ যানবাহনের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায়, গাধাগুলোই ছিল প্রধান মাধ্যম।

এ ছাড়া নিম্নআয়ের মানুষের জন্য গাধা একটি স্থিতিশীল জীবিকা প্রদান করত। তাদের সহনশীলতা এবং কম খরচের কারণে গাধাগুলো ছিল সবার আস্থার প্রতীক। তবে, বর্তমান সময়ে দেশটি মুদ্রাস্ফীতিতে খাদ্যের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শহরের জনসংখ্যা পাকিস্তানের স্বাধীনতার আগে যা ছিল, তার প্রায় ৫০ গুণ বেড়ে গেছে, ফলে গাধাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

আরো পড়ুন  প্রতিটি ভোট গণনার অপেক্ষায় থাকবেন কমলা, আজ দেবেন না ভাষণ

মোহাম্মাদ আতিফ, ‘রাজা’ নামের এক গাধার মালিক, তিনি বলেন, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমি চাই আমার সন্তানরা পড়ালেখা করে অন্য কিছু করুক।

তিনি আরও জানান, রাজার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭৫০ রুপি খরচ হয়, যা আগে ছিল মাত্র ২০০ রুপি। আতিফ বলেন, এখন এ কাজ থেকে জীবিকা অর্জন করা অসম্ভব। ভালো দিনে ৪,০০০ রুপি উপার্জন হলেও তা তার পরিবার এবং গাধার খরচ মেটাতে যথেষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাকিস্তানে প্রায় ৬০ লাখ গাধা আছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই করাচিতে। স্থানীয় পশু ব্যবসায়ী আসলাম শাহ জানান, গাধার চাহিদা কমে গেছে। মাসের পর মাস চলে যায়, কিন্তু আমরা একটি গাধাও বিক্রি করতে পারি না বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন  হিজবুল্লাহর হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করল ইসরাইল

পাকিস্তানে বর্তমানে গাধার পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার রিকশা পণ্য পরিবহনের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ২১ বছর বয়সী আলি উসমান বলেন, রিকশাগুলো দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তাই গাধার চাহিদা কমছে।

এদিকে যোগাযোগ বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘযাত্রা এবং খারাপ রাস্তার কারণে গাধাগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। উপযুক্ত সরঞ্জামের অভাবে মালিকরা দড়ি এবং কাপড়ের টুকরো দিয়ে গাধাদের বেঁধে রাখছেন, যা তাদের স্বাস্থ্যে ক্ষতি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে।

আরো পড়ুন  অ্যাম্বুলেন্সে অসুস্থ স্বামীর সামনে স্ত্রীর শ্লীলতাহানি, অতঃপর...

পাকিস্তানের সমাজের গাধা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, ব্যবসায়ীরা যখন দেউলিয়া হওয়ার মুখে, তখন তা দেশটির সংস্কৃতির জন্য সতর্ক সংকেত। ৭৬ বছর বয়সী গাধা ব্যবসায়ী গোলাম রাসুল বলেন, এ কাজ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। দুএক দিন কাজ না পেলে সমস্যা নেই, কেউ না কেউ আমাদের প্রয়োজন পড়বে।

পাকিস্তানের গাধা ব্যবসায়ীদের সংকট আধুনিক নগরায়ণ ও অর্থনৈতিক চাপের একটি প্রতিফলন। গাধার উপস্থিতি এবং তাদের মালিকদের অভিজ্ঞতা শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যাতে গাধা এবং তাদের মালিকদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা যায়।

সর্বশেষ সংবাদ