প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে না। কারণ একজন বিশ্বনেতা হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে উভয় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
রাজধানীর এফডিসিতে মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির উদ্যোগে এই ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘দুই দলেই তার (অধ্যাপক ইউনূস) বন্ধু আছে। সম্পর্ক অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর। অধ্যাপক ইউনূস একজন বিশ্বনেতা। সুতরাং কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচনে যিনিই জয়ী হোন না কেন, আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা বলা হয়। এর অর্থ হলো সরকারের তিনটি স্তরেই দুটি দল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দল দুটি হলো-রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।
দেশটির অন্য দলগুলো প্রায়ই ‘তৃতীয় পক্ষ’হিসেবে অভিহিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে গ্রিন পার্টি, লিবার্টারিয়ানস, কনস্টিটিউশন পার্টি ও ন্যাচারাল ল পার্টি।
প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যু এবং লবিস্টরা এই ইস্যুটিকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে।
বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর হামলা’র বিষয়ে বৃহস্পতিবার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, সেখানে তাদের ওপর ‘হামলা ও লুটপাট চালানো হচ্ছে এবং দেশটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে।’
শুক্রবার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, কী ভাবছেন তা ‘অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ’। তবে আমাদের কাজ সত্য প্রকাশ করা। তিনি (ট্রাম্প) শিগগিরই মুক্ত বিশ্বের নেতা হতে পারেন। কিন্তু আমাদের কাজ হচ্ছে সবচেয়ে স্বচ্ছ ও আকর্ষণীয় উপায়ে সত্য বলা।’
আলম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো এবং বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে এই সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায়। বাংলাদেশে সংঘটিত নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানে আমরা সারা বিশ্ব থেকে সমর্থন পেয়েছি। জনগণ জেগে উঠলে কোনো অশুভ শক্তি বাঁচতে পারে না।’
শুক্রবার রাতে সুইং স্টেট উইসকনসিনের বৃহত্তম শহর মিলওয়াকিতে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প একে অপরের থেকে কয়েক মাইলের ব্যবধানে সমাবেশ করেন।
মিলওয়াকি উইসকনসিনের সর্বাধিক ডেমোক্র্যাটিক ভোটের আবাসস্থল, তবে এর রক্ষণশীল রিপাবলিকান শহরতলিগুলো ট্রাম্পের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। কারণ তিনি ২০১৬ সালে অতি সামান্য ব্যবধানে জয়ী হওয়া রাজ্যটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন, যা ২০২০ সালে তিনি হারিয়েছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এক টুইটারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করায় পতিত সরকার মনে করছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের ফিরে আসা সহজ হবে। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তার সঙ্গে মোদির সম্পর্ককে পুঁজি করে তারা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পতিত স্বৈরাচারকে এ দেশের ছাত্র জনতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর গ্রহণ করবে না।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আরও বলেন, মার্কিন নির্বাচনের কয়েক দিন আগে গত পরশু হঠাৎ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সংঘ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দার বিষয়ে কেউ কেউ রহস্য খোঁজার চেষ্টা করছে। আসলে এটি ট্রাম্পের ভোটের রাজনীতির কৌশল। যেহেতু কমলা হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আমেরিকায় অবস্থানরত ভারতীয়রা বেশিরভাগই কমলাকে সমর্থন দেওয়ায় ট্রাম্প ভারতীয় হিন্দুদের সিম্প্যাথি পাওয়ার জন্য এই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে “আগামী মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না”শীর্ষক ছায়া সংসদে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, অধ্যাপক ড. এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হাসিব, সাংবাদিক আশিকুর রহমান অপু ও সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।