পৌনে ২ কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে আছেন দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি এলএসডির সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৯ টাকার ৩১৯ দশমিক ১৪১ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২০ টাকা মূল্যের ৪ হাজার ২৭৮টি খালি বস্তা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৭ মে) তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মহন আহম্মেদ কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, আনোয়ারা বেগম ডুগডুগি খাদ্য গুদামে পাঁচ বছর ধরে কর্মরত। আর দুই মাস পর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তার জায়গায় যোগদানের অনুমতি মেলে রায়হান নামে আরেক খাদ্য কর্মকর্তার। নতুন কর্মকর্তাকে গোডাউনের চার্জ বুঝে দেওয়ার আগেই কাউকে কিছু না বলে ২৫ এপ্রিল গুদাম তালা দিয়ে চাবি নিয়ে গা ঢাকা দেন তিনি। এ ঘটনায় গুদামে চালের ঘাটতি রয়েছে এমন সন্দেহে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২ মে) ঘোড়াঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের উপস্থিতিতে গুদামের তালা ভাঙ্গা হয়। সেই দিন থেকে শুরু করে সোমবার পর্যন্ত তদন্ত কমিটি মজুত যাচাই করেন।
এতে চাল রেকর্ডে থাকার কথা ১০৬৪ দশমিক ১৫৫ টন। কিন্তু মজুত পাওয়া যায় ৭৪৫ দশমিক ১৪ টন। ঘাটতির পরিমাণ ৩১৯ দশমিক ১৪১ টন। আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ প্রতি টন ৫২ হাজার ৪৭২ টাকা হিসেবে ৩১৯ দশমিক ১৪১ টনের মূল্য ১ কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৯ টাকা। অন্যদিকে ৫০ কেজি ওজনের খালি বস্তা ঘাটতি পাওয়া যায় ৪ হাজার ২৭৮টি। প্রতিটি ৯০ টাকা হারে মূল্য ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২০ টাকা। অর্থাৎ আত্মসাত করা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ২৭৯ টাকা।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকারী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মহন আহম্মেদ বলেন, টানা চার দিন তদন্ত কমিটি বাস্তব মজুত যাচাই করে বিশাল অঙ্কের ঘাটতি পেয়েছে। মঙ্গলবার খাদ্য গুদামে মজুতকৃত চালের ঘাটতি পাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে প্রতিবেদন আকারে পেশ করা হবে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদী করে আনোয়ারা বেগমের নামে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করছি। অনিয়ম করে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি খাদ্য গুদামে মজুতকৃত চালের ঘাটতি পাওয়ায় গুদাম কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। সেই সঙ্গে ওই গুদামে ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে নতুন একজনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে শিগগিরই বিভাগীয় মামলা হবে। পরে সেই মামলার তদন্তে অন্য কারও দায় আছে কি না তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টির পরপরই জেলার প্রত্যেক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সতর্ক করা হয়েছে এসব বিষয়ে তৎপর থাকার জন্য।