কুষ্টিয়া শহরের একটি বাড়ির লোকজনদের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় পাকা দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে প্রভাবশালী এক পরিবার। এতে ৮ পরিবারের ২৫ জন মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা বাড়ি থেকে বাইরে যাতায়াত করতে পারছেন না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের মোহাম্মদ আবদুল রহিম সড়কের বাসাটিতে বসবাসকারী লোকজনের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় জোরপূর্বক ইটের দেয়াল তুলে ওই পরিবারগুলোকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন মোমেন নামের এক ব্যক্তি।
ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী হারুনার রশীদ বাহরাইনে থাকেন। আমাদের বাসায় ভাড়াটিয়াসহ মোট ৮টি পরিবারের ২৫ জন মানুষ বসবাস করেন। আমাদের ক্রয়কৃত জমির ওপর নির্মিত রাস্তা দিয়ে ১৭ বছর ধরে আমরা যাতায়াত করি। ষড়যন্ত্র করে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটিতে পাকা দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন প্রভাবশালী মোমেন। এতে আমরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে পারছি না। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কুষ্টিয়া শহরতলীর চৌড়হাস মৌজার ৪৪৭৪ দাগের পিটিআই রোডের মোহাম্মদ আবদুল রহিম সড়কের ০.৬১ একর জমির মালিক প্রবাসী হারুনার রশিদের স্ত্রী নাজমা খাতুন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চলাচলের রাস্তার জমিটি প্রবাসী হারুনার রশিদের ক্রয়কৃত। অভিযুক্ত মোমেন তাদের প্রতিবেশী। তাদের বাড়ি পাশাপাশি।
ভুক্তভোগী জান্নাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। আমি একজন আইনজীবী। ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার পর আমি অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। আমার বাবার ক্রয়কৃত জমিতে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন পাশের জমির মালিক মোমেন। তিনি গায়ের জোরে অন্যায়ভাবে আমাদের রাস্তাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের বাড়িতে বসবাসকারী ২৫ জন বন্দী জীবন পার করছি। আমরা খুব দুর্ভোগের মধ্যে আছি। বাসা থেকে বের হতে পারছি না। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই।
ভুক্তভোগী নাইমা খাতুন বলেন, আমাদের জমির ওপর রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে ১৭ বছর ধরে যাতায়াত করছি। হঠাৎ আমাদের রাস্তার ওপর ইট দিয়ে দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে প্রভাবশালী মোমেন। আমরা অবরুদ্ধ অবস্থায় বন্দী জীবন পার করছি। এভাবে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাদের বাড়িতে যারা ভাড়া থাকেন তারাও বন্দী হয়ে গেছেন। কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। আমার ভাই ও বোন ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে অবরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
স্থানীয়রা বলেন, প্রবাসীর পরিবার ও তাদের বাসার ভাড়াটিয়ারা বহু বছর ধরে যেই রাস্তায় চলাচল করতো সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার জমির মালিকও ওই পরিবারের। কিন্তু রাস্তাটির জমি ব্যক্তিগত দাবি করে প্রতিবেশী মোমেন সীমানা প্রাচীর দিয়ে ওই পরিবারগুলোকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। চলাচলের রাস্তায় দেয়াল দেওয়ায় বন্দী তারা। এটি অমানবিক ও অন্যায়। এ সমস্যার সমাধান দরকার।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তাটা আমার জমির ওপর। আমার জমিতে আমি ইটের দেয়াল তুলেছি। কেউ বন্দী হলে আমি কি করব। আমার জমিতে আমি দেয়াল দিয়েছি। এতে সমস্যা কোথায়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল হক মুরাদ বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। সেখানে গিয়ে দেখব।
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতীম শীল বলেন, কারো চলাচলের রাস্তা বন্ধ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।