দেশে অতীতের রের্কড ভেঙেছে টানা একমাসের দাবদাহ। হাফফাস করছে মানুষ ও প্রাণীকুল। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে গাছের গুরুত্ব যখন সর্বত্র তখন উল্টো পথে বন বিভাগ। তিস্তা সেচ ক্যানেল সংস্কার ও সম্প্রসারণের নামে রংপুরের তারাগঞ্জে ৪ হাজার গাছ কাটছে বন বিভাগ। আর পুরো বিভাগে গাছ কাটা হচ্ছে অন্তত ৪ লাখ। এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন সমাজকর্মী, পরিবেশবিদসহ সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে রংপুরের তারাগঞ্জে দেখা যায়, রোদ্দুরে আগুনের হলকা উপেক্ষা করে তিস্তা সেচ ক্যানেলের ধারে থাকা গাছ কাটতে ব্যস্ত একদল শ্রমিক। এতে গাছ গাছালিতে ভরে থাকা তিস্তা শেষ ক্যানাল এখন পরিণত হচ্ছে মরুভূমিতে। কথা হয় ক্যানেল ঘেঁষা দৌলতপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রক্ষই যখন ভক্ষক তখন আর কী করা যাবে। বন বিভাগের উচিত গাছপালা লাগানো। তা না করে তারাই এখন গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। এতে আমাদের পুরো ক্যানেলটা এখন গাছ শূন্য হয়ে গেল।
ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, ‘ছোট বড় কোনো গাছই বাদ দিচ্ছে না। সব কেটে সাবার করছে। গাছগাছালি থাকায় ক্যানেলের ধারে বিকেলে অনেকেই ঘুরতে আসতো। এখন তো আমাদের আশপাশের ৬-৭ গ্রামের মানুষের তারাগঞ্জ যাতায়াতে কষ্ট হবে। গাছগুলো কাটা বনবিভাগের হটকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই না।’
পঞ্চাশোর্ধ বৃদ্ধ মতলুবার রহমান বলেন, ‘নিজের হাতে এই গাছগুলো লাগাইছি। এখন গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। পুরো এলাকাটা আমাদের মরুভূমি হয়ে গেল।’
দশম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী সুরুজ মিয়া জানায়, ক্যানেলের ধারে গাছ থাকায় আমরা শান্তিতে স্কুল কলেজ যাওয়া আসা করতে পারতাম। কিন্তু এখন খাঁ খাঁ রোদ মাথায় নিয়ে স্কুল বাড়ি যেতে হবে। আর গাছগুলোর তো বেশি বয়সও হয়নি। এগুলো না কাটলে কী এমন ক্ষতি হতো।
জানা যায়, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ ক্যানেল সংস্কার ও সম্প্রসারণে একটি প্রকল্প নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এই প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সংস্কারের নামে দরপত্র দিয়ে সেচ ক্যানেলের দুই ধারসহ পুরো বিভাগের প্রায় ৪ লাখ গাছ কাটছে বন বিভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যখন বিপর্যস্ত রংপুর বিভাগ তখন আত্মঘাতী এমন পদক্ষেপকে পাশ কাটিয়ে গাছ রক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি পরিবেশবাদীদের।
পরিবেশবিদ ড. তুহিন ওয়াদুদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘সারা দেশের তাপ প্রবাহ এ বছর ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই পরিস্থিতিতে যখন গাছ কাটতে পারি আমরা, এটা শুধুমাত্র একটা নির্মমতা। যে প্রকল্প এখানে নেওয়া হয়েছে এই কাজ সুরক্ষা করেও তা বাস্তবায়ন করা যেত। যে প্রকল্প গ্রহণ করাই জনবান্ধব হয় নাই সেই প্রকল্প যখন পরিবেশের ক্ষতি করে তখন এটা কয়েক স্তরে ক্ষতিসাধন করে। আমরা মনে করি যে পর্যন্ত গাছ কেটেছে এখনই গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। একসঙ্গে কেন এত গাছ কাটা হলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানা নেই পরিবেশবিদ।’
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষায় সব মহল থেকে যখন গাছ রক্ষার দাবি উঠেছে ঠিক সেসময় কেন এমন সিদ্ধান্ত! বিষয়টি জানতে রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।