28 C
Dhaka
Monday, July 1, 2024

একসঙ্গে পরীক্ষায় বসে মেয়ের চেয়ে এগিয়ে ইউপি সদস্য মা

প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে ঘর-সংসার সামলে, জনপ্রতিনিধিত্ব করে, বয়সের বাধা ডিঙিয়েও অসাধ্য সাধন করা যায়। তারই প্রমাণ দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের নুরূন্নাহার বেগম নামের এক সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য।

মেয়ের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৪ পেয়েছেন তিনি। মেয়ে নাসরিন আক্তার মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ২ দশমিক ৬৭ পেয়েছেন। তাদের এ ফলাফলে মা, মেয়ে ও পরিবারের সবাই খুশি।

মা ও মেয়ের এমন সাফল্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে নুরূন্নাহার বেগম কালবেলাকে বলেন, আমি অনেক খুশি। আসলে এমন ভালো রেজাল্ট আসবে ভাবিনি, আল্লাহ পথ দেখিয়েছেন। আমি মনে করি নারীদের পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই, নারীদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই এই বয়সে আবার পড়ালেখা শুরু করেছি। আমি দুবার নির্বাচিত ৯ হাজার ভোটারের মহিলা মেম্বার। সংসারের কাজ আমি নিজে করি, কখনো কোনো কাজের মহিলা নেয়নি। সব কাজ শেষ করে মধ্যরাতে মাঝে মাঝে অল্প সময় পড়াশোনা করেছি। সব দিক সামলে পরীক্ষার হলের চতুর্থ তলায় উঠে পরীক্ষা দিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ায় এখন বেশ আনন্দ লাগছে।

আরো পড়ুন  স্বামীর ফার্মেসিতে মিলল স্ত্রীর মরদেহ

বিয়ের আগে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন নুরূন্নাহার বেগম। শ্বশুর-শাশুড়ি আগ্রহী না থাকায় বিয়ের পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার। পরবর্তীতে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি চাতলপাড় ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। উনার মেয়ে নাসরিন আক্তার পড়াশোনা করতেন একই বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগে। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় নুরূন্নাহার বেগম চাতলপাড় ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ২৫ পান। মেয়ে নাসরিন আক্তার চাতলপাড় ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ২ দশমিক ৬৭ পেয়ে পাস করেন।

আরো পড়ুন  আবাসিক হোটেলে পুলিশের অভিযান, ২০ তরুণ-তরুণী আটক

এ বিষয়ে মেয়ে নাসরিন বলেন, আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় মন কিছুটা খারাপ হলেও মা ও মেয়ে একসঙ্গে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। আমি মানুষের সেবা করতে চাই। সেই মানসিকতা থেকে আমি ভবিষ্যতে নার্সিংয়ে যুক্ত হতে চাই।

নুরূন্নাহার বেগম বলেন, চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। স্কুল ও কলেজে ক্লাস করার সময় সহপাঠীরা যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছে। শিক্ষকেরাও আমাদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন। উনারা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। এ ছাড়া পড়াশোনার পেছনে আমার বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য ও অনুপ্রেরণা না পেলে আমার পক্ষে পড়াশোনা করা সম্ভব হতো না।

আরো পড়ুন  ঘূর্ণিঝড় রিমাল ঘূর্ণিঝড় দেখতে সাগরপাড়ে পর্যটকদের ভিড়
সর্বশেষ সংবাদ