24 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

বরিশালের ফিরোজি যেন আরেক মিল্টন সমাদ্দার

এবার বরিশালে মানবতার ফেরিওয়ালা নামধারী আরেক মিল্টন সমাদ্দারের আবির্ভাব হয়েছে। তিনি হচ্ছেন নূরুল ইসলাম ফিরোজি। ব্যক্তি মালিকানায় এতিম শিশুদের নিয়ে মাদ্রাসা করে তিনি রীতিমতো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। মাসে লাখ টাকা অনুদান পেলেও খাবারের সংকটের প্রচার চালিয়ে এতিম শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাচ্ছেন। নেই সমাজসেবা অধিদফতরেরও কোন অনুমতি। তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি তার।

মাদ্রাসায় খাবার নেই। তাই এতিম শিশুদের নিয়ে দুমুঠো খাবারের আশায় রাস্তায় নেমেছেন বরিশাল নগরীর পলাশপুর রহমানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা লিল্লাহ বোডিং এর পরিচালক নূরুল ইসলাম ফিরোজি। মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে নিজেকে জাহিরে ব্যস্ততার শেষ নেই তার।

মাদ্রাসাটিতে গেলেই দেখা মেলে খাবারের অভাবে করুণ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর মাদ্রাসাটিতে অনুদান দেয়া ব্যক্তিদের অভিযোগ, মাসে লাখ টাকা অনুদান আসলেও সেই টাকা আত্মসাৎ করে নিজ পকেট ভারি করেন ফিরোজি। এমনকি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নিয়েও আছে গড়মিল।

অনুদান দেয়া ব্যক্তিদের একজন সৈয়দ সাকিব বলেন, আমার বোন ও দুলাভাই প্রতিমাসে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পাঠায় আমেরিকা থেকে। ওখানে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে তাদের। সেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসার লাভের টাকার পুরোটা বিভিন্ন সময় আমি নিজে গিয়ে নূরুল ইসলাম ফিরোজির মাদ্রাসায় দান করি। ঈদ থেকে শুরু করে কোরবানি কোন সময় টাকা অনুদান দেয়া বাদ যায়নি। তবে প্রায়ই তাদের দেখে সন্দেহ হতো। মাদ্রাসায় ছাত্রের সংখ্যা তিনি যা দেখাতেন সরেজমিনে তার চেয়ে কম পাওয়া যেত। এমনকি টাকার হিসেবেও গড়মিল করে। আমি নিজে এতো টাকা দেই, তারপরও কেনও এতো অভাব থাকবে।

আরো পড়ুন  ঝিকরগাছায় আ.লীগ নেতাসহ তিনজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টা

সাকিব আরও বলেন, নূরুল ইসলাম ফিরোজিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় অনুসন্ধান চালালে জানতে পারি তিনি আরও অনেক জায়গা থেকে টাকা আনেন। এরপরও অভাব দেখানো দুঃখজনক। আমি চাই, নূরুল ইসলাম ফিরোজি এতিম শিশুদের নিয়ে যে ব্যবসা করে তার শাস্তি হোক। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে।

কাগজে কলমে মাদ্রাসাটিতে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থী মিলিয়ে ৬৩ জন। তবে বাস্তবে আছে ২৫ থেকে ৩০ জন। শিক্ষার্থীরা জানান, খাবারের অভাব দেখা দিলে ভিক্ষাবৃত্তি করতে নামে তারা। আর এতো সংকটের মাঝেও পরিচালক নূরুল ইসলাম ফিরোজির পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ৪ ছেলেকে এতিমখানায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদে।

আরো পড়ুন  ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে রেমাল, বিকেল ৩টায় ‌‘আছড়ে পড়বে’ অগ্রভাগ

শিক্ষার্থীরা জানায়, খাবারের অভাব দেখা দিলেই আমরা ভিক্ষা করতে নামি। যেদিন টাকা বেশি উঠাতে পারি ভিক্ষা করে সেদিন খাবার-দাবার ভালো হয়। যেদিন কোন টাকা পাই না সেদিন কোনোভাবে খেয়েদেয়ে দিন কাটে। খুব কষ্টে যাচ্ছে আমাদের জীবন।

নুরুল ইসলাম ফিরোজীর ছেলে মাওলানা মো. রাসেল বলেন, আমরা মোট ৪ ভাই মাদ্রাসায় বিভিন্ন পদে চাকরি করি। আমরা বাবা মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর ভালোমন্দ আমাদের দেখতে হয়। আমরা ৪ ভাই ও বাবা মিলে অনেক কষ্টে মাদ্রাসাটি চালাচ্ছি।

অর্থ লোপাটের অভিযোগ মানতে নারাজ নূরুল ইসলাম ফিরোজি। এমনকি সময় সংবাদের কাছে মাসে লাখ টাকা অনুদান আসার প্রমাণ থাকলেও তার দাবি ৩০ হাজার টাকা অনুদান পান তিনি।

পলাশপুর রহমানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের পরিচালক নূরুল ইসলাম ফিরোজি বলেন, আমার মাদ্রাসায় মাত্র ৩০ হাজার টাকা অনুদান আসে। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে আমার মাদ্রাসায় লাখ লাখ টাকা অনুদান দেয় তাহলে তা মিথ্যা। আমি এবং আমার ছেলেরা খুব কষ্টে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করি।

আরো পড়ুন  সিলেটে চিনিকাণ্ডে বিএনপির ২ নেতা বহিষ্কার

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সমাজসেবা অধিদফতর জানিয়েছে, কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই এতিমখানা ও মাদ্রাসা খুলেছেন নূরুল ইসলাম ফিরোজি।

বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ পরিচালক একেএম আখতারুজ্জামান তালুকদার বলেন, পলাশপুর রহমানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের কোন রেজিস্ট্রেশন নেই। এছাড়া সমাজসেবার একটা নিয়ম আছে যদি কেউ এতিমখানা খুলে এবং সেখানে থাকা শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করায় তাহলে তা বড় অপরাধ। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

স্থানীয় একটি মাদ্রাসার খাদেম থেকে ২০১৬ সালে হঠাৎ বরিশাল নগরীর পলাশপুর এলাকায় রহমানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা লিল্লাহ বোডিং প্রতিষ্ঠা করেন নূরুল ইসলাম ফিরোজি। ৪ ছেলেকে নিয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

সর্বশেষ সংবাদ