বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ বক্তব্যের বিচার দাবি করে অগ্রিম ইস্তফার ঘোষণা দিয়েছেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মোহিত উর রহমান শান্ত।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কুদ্দুসের এক বক্তব্যের প্রতিবাদে গত সোমবার (১৩ মে) ভোর ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এই ঘোষণা দেন এমপি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে সমালোচনার ঝড়।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে দেখা যায় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর ওই পোস্টে রিয়েক্ট পড়েছে ২৮ শর অধিক, মন্তব্য পড়েছে ৭৭৩টি এবং পোস্টটি শেয়ার করেছেন ৩৩৪ জন।
এরপর থেকেই তার এই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে ময়মনসিংহের রাজনীতিতে গরম বাতাস বইতে শুরু করেছে বলেও মনে করছেন অনেকেই।
ওই পোস্টে মোহিত উর রহমান শান্ত লিখেছেন- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গোটা পৃথিবী যেখানে আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, একটি অবাধ এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভের পর সবাই যখন আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আপনার সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ তখন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সন্তানের রক্তের সাথে আপস করা, সন্তানের খুনিদের সাথে আপস করা এমএ কুদ্দুস সেই অবাধ, সুষ্ঠ আর নিরপেক্ষ নির্বাচনকে আমাদের প্রানপ্রিয় আপনাকে বিতর্কিত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বাকস্বাধীনতার অর্থ মিথ্যাচার হতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে আমি অগ্রিম ইস্তফা দিয়ে রাখলাম। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে আপনি হয় আমার ইস্তফা গ্রহণ করবেন এবং জড়িত প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করবেন, না হয় ব্যক্তি স্বার্থে বিরোধীদের হাতে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার খোরাক তুলে দেওয়ার জন্য এম এ কদ্দুসের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করবেন।’
প্রধামনমন্ত্রী, আইজিপিসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের হ্যাসট্যাগ করা ওই পোস্টে এমপি শান্ত ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায়- একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কুদ্দুস বলছেন, ‘বিগত নির্বাচনে তিন মাস কাজ করে সদরের প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে আমিনুল হক শামীম নেতা হিসেবে পরিচয় লাভ করেছেন। গত নির্বাচনে আপনারা ‘ট্রাক’ মার্কাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। সেখানে আমিনুল সাহেব ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু অদৃশ্য হাতের ইশারায় তাকে ফেল করানো হয়েছে। এক লাখ তিন হাজার ভোট পেয়েছেন তিনি। ৫০ হাজার ভোট এদিক-সেদিক করে নৌকাকে পাস করানো হয়েছে। তাইলে ৫০ হাজার ভোটে এই ভদ্রলোক (আমিনুল হক শামীম) পাস করে।
এই অনুষ্ঠানে ট্রাক প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম, শওকত জাহান মুকুল, দপ্তর সম্পাদক দীন ইসলাম ফকরুল, ছাত্রলীগ সভাপতি আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবীরসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই বিষয়ে সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সারাবিশ্বে প্রশংসিত। অথচ জেলা আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা জনসভায় একজন ব্যক্তিকে তোষামোদ করার জন্য ওই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। পরে ওই বক্তব্যের ভিডিওটি আমিনুল হক শামীম তার নিজের ভেরিফাইড আইডিতে এই পোস্টটি শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতে তারা দুজনেই দল ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এ ঘটনায় আমি দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করছি। এনিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হবে।
তবে এই বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কদ্দুসের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে প্রথমে ময়মনসিংহ-৭ এবং পরে ময়মনসিংহ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে এম এ কুদ্দুস ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।