শিক্ষা জিনিসটা যে স্কুল-কলেজ থেকে আসে না, আসে নিজের ভেতরের মূল্যবোধ দিয়ে—সে সম্পর্কে নিশ্চিত হলাম। যেমন ধরেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিফ মাহতাব উৎস। সে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে ট্রান্সজেন্ডারদের মানুষের মর্যাদা দিতে পারেনি, এই বিষয় নিয়ে স্কুলের বইতে যে চ্যাপ্টার আছে সেটা গিয়ে প্রকাশ্যে ছিঁড়েছে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সেমিনারে।
মজার ব্যাপার হলো সে কিন্তু গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গে কমিউনিটিকে সাপোর্ট করার কারণে বিখ্যাত। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয় যদি জানে তাদেরই এক ছাত্র এখানে পড়াশোনা শেষ করে নিজের দেশে ফিরে প্রকাশ্যে একটা নির্দিষ্ট জেন্ডারের মানুষকে মানুষ বলেই মনে করছে না, তাদের কেবল জেন্ডারের জন্য তাদের অন্যায়ভাবে শেমিং করছে তাহলে কেমন হবে?
আসিফ ক্লাস নিতে যাবেন না, কারণ তার চাকরি থেকে সাসপেনশন হয়েছে জেনে আমি একটা কমেন্ট করেছিলাম। এরপর সেই কমেন্টের রিপ্লাইতে আমাকে ট্রান্সজেন্ডার, থার্ড জেন্ডার, লেসবিয়ান বলে কমেন্ট করা হয়েছে!
কিন্তু এতে কি আমি রাগ করেছি? উত্তর হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে আমি ট্রান্সজেন্ডার কিংবা সমকামী হলে বরং আরো খুশি হতাম, কারণ ওইরকম একটা সমাজ যেখানে আপনার লৈঙ্গিক পরিচয়কে বিশাল করে দেখা হয়—সেই সমাজে যোগ্যতা প্রমাণ করা স্বাভাবিক সমাজের চেয়ে কঠিন অনেক গুনে।
সেই সমাজ এখনো অসভ্য। তাদের শিক্ষা দেয়া সহজ কথা না। সেই সমাজে যে ফাইট করতে পারে তার চেয়ে বড়ে হিরো জগতে কম আছে।
আসিফ যদি পশ্চিমের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে আসতো তাহলে অবশ্যই তার কোথাও চাকরি হতো না। যদি হতো তাহলে সে যে কাণ্ড করেছে তার পরবর্তীতে এই কাজের জন্য আজীবন সকল বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সারাজীবনের জন্য ব্ল্যাকলিস্টে তুলে ফেলতো।
অথচ সে ভাগ্যবান যে সে বাংলাদেশে জন্মেছে। ব্র্যাকে তার চাকরি যাওয়া ছাড়া কিছুই হবে না। এমন হতে পারে যে সে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হয়ে গেছে এবং ক্লাসের ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীদের মানুষ বলে মনে করছে না। তাদের উপহার দিচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ ট্রমা!
আসিফ, আপনি মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে শিখুন। আপনি দেশে যে বাহাদুরিই করুন, ইউরোপের কোথাও যদি আপনি কখনো শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পান তখন আপনার বিরুদ্ধে আমি লিখবো। ইউরোপের কোথাও যেন শিক্ষক হিসেবে আপনার চাকরি না হয়, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে আমি থামব না।
কারণ যে লোক সকল জেন্ডারের মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে পারে না, তার কোনো যোগ্যতা নেই শিক্ষক হওয়ার। সে আগে মানুষ হোক, শিক্ষক হওয়ার এতো তাড়া কীসের? তার কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা শিখবেটা কি?
প্রবাসী লেখক ও সমালোচক জান্নাতুন নাঈম প্রীতীর [ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]