ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে চিঠি লিখেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চিঠিতে তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন। পুতিন তার এই চিঠিতে নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির ব্যাপক প্রশংসা করেছেন।
মঙ্গলবার, (২০ মে) লেখা চিঠিতে পুতিন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রাইসি সারাজীবন দেশের কাজেই নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। তার মৃত্যু ইরানের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে মন্তব্য করে পুতিন লেখেন, প্রেসিডেন্ট রাইসি ছিলেন একজন ‘চমৎকার রাজনীতিবিদ’।
চিঠিতে পুতিন আরও বলেন, রাশিয়ার সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে প্রেসিডেন্ট রাইসি দুই দেশের মধ্যকার সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে তা কৌশলগত সম্পর্কে পরিণত করেছেন।
এদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মোখবারের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন। সেসময় তারা রাশিয়া-ইরানের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। দুই নেতাই পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন। এছাড়া ইরানকে সহযোগিতা করার জন্য এই মুহূর্তে যা যা প্রয়োজন সব করতে রাশিয়া প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান পুতিন।
এর আগে রোববার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি। হেলিকপ্টারে রাইসি ছাড়াও ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম।
দুর্ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রেসিডেন্ট রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতিসহ হেলিকপ্টারটির সকল আরোহী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন ইরানের কর্মকর্তারা। সোমবার (২০ মে) বিবিসি, রয়টার্সসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়।
ইব্রাহিম রাইসি ছিলেন ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ ও বিচারক। রাইসি বিশ্ব রাজনীতিতেও অন্যতম প্রভাবশালী নেতাদের একজন। ইব্রাহিম রাইসি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার কারণেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে।
তিন বছর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ইব্রাহিম রাইসিকে মনে করা হয় একদিন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির উত্তরসূরি হবেন।
ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন রাইসি। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
প্রেসিডেন্ট রাইসি পরবর্তীতে ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ সভার উপচেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এ সভা। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
দীর্ঘ দিন ধরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক চলে আসছে ইরানের। ইব্রাহিম রাইসি ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় প্রতিবেশীদের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন তিনি।