দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার আশপাশের পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে আগামী ২৬ মে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বুধবার (২২ মে) এসব তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বর্তমান প্রেডিকশন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ বাংলাদেশ, মিয়ানমার বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা অঞ্চলের দিকেই। তবে এর গতিপথ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিনিয়ত গতিপথ পরিবর্তন করছে; রাতে একটা গতিপথ থাকছে, আবার সকালে আরেকটা। তাই লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত এমনই থাকবে। নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তখন গতিপথ স্থির হবে। সেই সময় স্পষ্টভাবে বলা যাবে, এটা কোন এলাকায় বা স্থানে আঘাত হানতে পারে।
তিনি বলেন, ২২ মে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ২৩ বা ২৪ মে’র মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। ২৪ মে রাতে বা ২৫ মে সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তখন এর নাম হবে ‘রেমাল’। এ নামটি ওমানের দেয়া। এটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ বালির কণা।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের নেপথ্যে
এক সময় ঝড়গুলোকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে ছিল দুর্বোধ্য। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো।
নামবিহীন থাকলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি, ধরন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত জানা যায় না। এর আঘাত হানার সময় বা তারিখ বের করে পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হয় আবহাওয়াবিদদের। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ।
যেভাবে নামকরণ করা হতো
গত কয়েক শতাব্দী ধরে আটলান্টিক ঝড়ের নাম দেয়া হয়ে আসছে; যেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বলবৎ থাকে। এরপরে আবহাওয়াবিদরা মিলে মেয়েদের নামে ঝড়গুলোর নামকরণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৩ সালে US Weather Service আনুষ্ঠানিকভাবে Q, U, X, Y, Z ছাড়া A থেকে W পর্যন্ত আদ্যক্ষরে মেয়েদের নামে ঝড়ের নামকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ নিয়ে ৬০ এবং ৭০ এর দশকে নারীদের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে ১৯৭৮ সালে ছেলেদের নামেও ঝড়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বছরের প্রথম ঝড়ের নাম রাখা হতো A আদ্যাক্ষর দিয়ে, দ্বিতীয় ঝড়ের নাম রাখা হতো B আদ্যাক্ষর দিয়ে, এভাবে চলতে থাকত। আবার জোড় সালের বেজোড় ঝড়গুলোর (মনে করি ২০১৪ সালের ৩য় ঝড়) নাম রাখা হতো ছেলেদের নামে আর বেজোড় সালের বেজোড় ঝড়গুলোর নাম রাখা হতো মেয়েদের নামে।
এক বছরে ২১টির বেশি হারিকেন উৎপন্ন হলে (২০০৫ সালে যেমন হয়েছিল), গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী নামকরণ করা হয়: হারিকেন আলফা, বিটা ইত্যাদি।
নাম কীভাবে ঠিক করা হয়?
এখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শত শত কেন্দ্র, উপকূলীয় ঘাঁটি ও সমুদ্রে অবস্থিত জাহাজগুলোতে ঝড়ের তথ্য পাঠানোর জন্য যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত ও সহজে উচ্চারণযোগ্য নাম ঠিক করা হয়। পুরানো জটিল পদ্ধতিতে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ দিয়ে নির্ণয়ের চাইতে এই প্রক্রিয়া অনেক বেশি সহজ এবং এতে ভুল কম হয়। ১৯৫৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টারের তৈরি তালিকা থেকে আটলান্টিক ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয়।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নারীসুলভ নাম দেয়া শুরু হয়। তবে এ প্রক্রিয়াকে আরও সুসংগঠিত ও কার্যকরী করে তোলার জন্য আবহাওয়াবিদরা একটি তালিকা থেকে নাম বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেন বলে ডব্লিউএমও’র ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়।
নামকরণের ক্ষেত্রে দেশগুলোকে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়, তা হলো- নামটি যেন লিঙ্গ নিরপেক্ষ হয় এবং কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। এছাড়াও, নামটি হবে সর্বোচ্চ আট অক্ষরের। কোনো সদস্য দেশের অনুভূতিতে আঘাত করে বা তাদের প্রতি অপমানসূচক কোনো নামও রাখা যাবে না। যদিও প্যানেলের হাতে ক্ষমতা থাকে প্রস্তাবিত কোনো নাম প্রত্যাখ্যান করে দেয়ার, তবুও চূড়ান্ত নামকরণের পরে কোনো সদস্য দেশ আপত্তি জানালে তা পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন হতে পারে। আর একবার যে নাম ব্যবহার করা হয়, তার আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না কখনো।