ভারতে চিকিৎসা করতে গিয়ে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার মার্কিন এক নাগরিকের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ওঠেছিলেন বলে জানিয়েছেন সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী।
গত ১২ মে ভারতে চিকিৎসা করাতে যান আনোয়ারুল। প্রথমে উঠেছিলেন বরাহনগরে এক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। দিন দুয়েক সেখানে থাকার পর এক দিন বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল। তার পর থেকেই আর খোঁজ মিলছিল না।
আনোয়ারুলের পরিবারও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে অগত্যা গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। গোপাল তাদের জানান, তিনিও আনোয়ারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
সিআইডির আইজি অখিলেশ জানিয়েছেন, খোঁজ না পেয়ে গোপাল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে একটি দল গঠন করে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট।
অখিলেশ বলেন, সেই তদন্ত চলছিল। তার মধ্যে ২২ মে আমরা জানতে পারি, তাকে খুন করা হয়েছে। শেষ বার যেখানে তাকে দেখা গিয়েছিল, সেই জায়গাটি খুঁজে বার করে স্থানীয় থানা। এর পরে সিআইডিকে তদন্তের ভার দেয়া হয়।
সিআইডি সূত্রে খবর, নিউটাউনের যে আবাসনে আনোয়ারুল ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে, সেই ফ্ল্যাটটির মালিক সরকারি কর্মচারী জনৈক সন্দীপ। তিনি আবার আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন। সিআইডির আইজি জানিয়েছেন, আখতারুজ্জামান আমেরিকার নাগরিক। কিন্তু আখতারুজ্জামানের নামে ভাড়া নেয়া ফ্ল্যাটে কী করে আনোয়ারুল থাকলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে অখিলেশকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তিনি জবাব দেননি।
অখিলেশ বলেন, ১৮ তারিখে একটি নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তার পর ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট একটি এসআইটি গঠন করে। সেই তদন্ত করতে গিয়েই আমরা খবর পাই।
নিউটাউনের আবাসনের ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সিআইডি কর্তা জানিয়েছেন, আনোয়ারের দেহ এখনও উদ্ধার হয়নি।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
আনারের জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে। পেশায় ব্যবসায়ী আনার আওয়ামী লীগ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।
ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে তিনবার (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) নির্বাচিত আনার একজন ক্রীড়া সংগঠক এবং একসময়ের জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড়।
ছাত্রজীবন থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে শুরু করেন। স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে ভোটের রাজনীতি শুরু করেন তিনি। এরপর বিশাল ভোটের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন আনার। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও তিনি জয়ের ব্যবধান দিয়ে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেন।