23 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

এমপি আনার খুন: যুক্তরাষ্ট্রে বসে যা জানালেন অভিযুক্ত শাহীন

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড বলা হচ্ছে তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনকে। তিনি পাশের উপজেলা কোর্ট চাঁদপুরের পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমের ভাই। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শাহিন কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের ৫৬বিইউ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়ার কথা স্বীকার করলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, কিলিং মিশনের পরিকল্পনা হয় দুই থেকে তিন মাস আগে ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরায়। পরিকল্পনা সবকিছু পরখ করে নিতে ৩০ এপ্রিল কলকাতায় যান শাহীন, সিয়াম ও জিহাদ। ১০ মে ঢাকায় ফেরেন শাহীন।

কলকাতা পুলিশকে দেয়া এক চিঠিতে ৫৬বিইউ ফ্ল্যাটটির মালিক নাজিয়া বানু জানান, চাল ও ডাবুর পণ্য নিয়ে ব্যবসার কাজের কথা বলে ২৫ এপ্রিল ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন আক্তারুজ্জামান। ৩০ এপ্রিল বিকেলে ফ্ল্যাটের চাবি বুঝে নেন তিনি।

পরদিন পহেলা মে ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করেন এমপি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম আসা আক্তারুজ্জামান শাহীন। ১১ মাস ওই ফ্ল্যাটে থাকার ঘোষণা দিয়ে ভাড়াটিয়া ফর্মে স্বাক্ষরও করেন তিনি। তার সঙ্গে আমানুল্লাহ সাইদ ও শিলাস্তি রহমান থাকবেন বলেও উল্লেখ করা হয় ভাড়াটিয়া তথ্য ফর্মে। এটি ভাড়া নিতে সহযোগিতা করেন বিরেন ভদ্র নামে এক ব্যক্তি।

আরো পড়ুন  সিলেটে চিনিকাণ্ডে বিএনপির ২ নেতা বহিষ্কার

সব অভিযোগের তীর যখন শাহীনের দিকে ঠিক তখন বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে টেলিফোনে শাহীন জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও জানান তিনি।

কলকাতা পুলিশের রিপোর্টেও সন্দেহের তীর আক্তারুজ্জামান শাহীনের দিকে। টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১৩ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার কথা ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন শাহীনের সহযোগী আমানুল্লাহ।

সিসিটিভির ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কলকাতার পুলিশ বলছে, মাস্টার মাইন্ড শাহীনসহ কিলিং মিশনে সাতজনের প্রাথমিক সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন  শেখ হাসিনার সরকার চুরির তালিকায় পাঁচবার প্রথম : চরমোনাই পীর

শাহীন নিজেকে নিরপরাধ দাবি করলেও ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের মানুষের দাবি, অপরাধের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন তিনি। মাদক কারবার ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত তিনি।

কিছুদিন আগে কোটচাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে তার ভাই সেলিমকে বিজয়ী করতে প্রভাব ছিলো শাহীনের — এমন অভিযোগও রয়েছে। তবে, আনার হত্যাকাণ্ড কিংবা অন্য কোন অপরাধে তার ভাই জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করেন না কোটচাঁদপুরের পৌর মেয়র শহীদুজ্জামান সেলিম।

এদিকে, আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জিহাদ হাওলাদার জিহাদ নামে আরও এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। তিনি খুলনার দিঘলিয়া থানার বারাকপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদার।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সিআইডি জানায়, জিহাদ অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস করতেন। দুমাস আগে সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার জন্য কলকাতায় আনে আখতারুজ্জান শাহীন। খুনের সময় আরও চার বাংলাদেশি ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। কিলিং মিশন শেষে মরদেহ টুকরো টুকরো করে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে গুম করা হয় বলে জানান জিহাদ। আজ (শুক্রবার) উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে জিহাদকে তোলা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

আরো পড়ুন  সৌদিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

অন্যদিকে সংসদ সদস্য আনারের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারে রাতেই আটক ক্যাব চালককে নিয়ে কলকাতায় অভিযানে নামে সিআইডি।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কলকাতার কাশিপুর থানার অন্তর্গত ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি এলাকায় অভিযানে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে তারা। সরিয়ে দেয়া হয় আশপাশের লোকজনকে।

ক্যাব চালক জোবায়ের স্বীকারোক্তিতে জানান, সংসদ সদস্য আনারের লাশ গুমের সময় তিন জন উঠেছিলেন ওই ক্যাবে। এরপর নানা পরিকল্পনা করে মরদেহ ফেলা হয় কৃষ্ণমাটি এলাকায়। মরদেহ গুম করতে ব্যবহৃত সাদা রঙের ওই গাড়ি জব্দ করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

সর্বশেষ সংবাদ