সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের মতো অতীতে অনেকের বিরুদ্ধেই ওঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। অবৈধ অর্থ উপার্জনের কারণে কেউ ধরা খেয়েছেন, কেউ আবার পার পেয়ে গেছেন। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন। কিন্তু বেনজীরের ক্ষেত্রে যাতে পিকে হালদার কিংবা বাচ্চুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে এখনি পদেক্ষপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন আইনজীবীরা। যদিও বেনজীর এখন কোথায়, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। গুঞ্জন ওঠেছে বেনজীর দেশে আছেন তো?
ব্যাংকপাড়ায় এক সময়ের আলোচিত নাম ছিলো প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। দেশের কয়েকটি আর্থিক খাতকে পথে বসিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। প্রথমে তার হদিস না মিললেও ২০২২ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোক নগর থেকে গ্রেফতার হোন পিকে হালদার। তিনি এখন আছেন দেশটির নিরাপত্তা হেফাজতে। কিন্তু দেশ ছেড়েছিলেন কীভাবে? এ নিয়ে আছে চমকপ্রদ এক কাহিনী!
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান পিকে হালদার। তাও আবার বেনাপোল বন্দরে তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার চিঠি পৌঁছানোর ১৩ মিনিট আগে। এ নিয়ে তোলপাড় হয় দেশজুড়ে। পিকে হালদারের পালানোর সময় কারা ইমিগ্রেশনে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়িত্বরত ছিলেন সেই তালিকাও চেয়েছিলেন উচ্চ আদালত। বিষয়টি এখনও দুদক এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করাতেই আটকে আছে।
শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিতে নিজের মোবাইল ফোনটি ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলের রুমে রেখে যান পিকে হালদার।
ব্যাংক খাতের আরেক আলোচিত নাম আবদুল হাই বাচ্চু। তিনি ছিলেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তার সময়ে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয় ৫৯টি। প্রথমে কোনও মামলায় আসামির তালিকায় ছিলেন না বাচ্চু। পরে সবকটি মামলাতে তাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। কিন্তু এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তিনি। এমনকি বাচ্চু কোথায় — দেশে আত্মগোপনে, নাকি বিদেশে পালিয়েছেন — জানে না দুদক।
এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নাম বেনজীর আহমেদ। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পদের পাহাড় দেখে হতবাক সবাই। এরই মধ্যে বেনজীরের ৬২১ বিঘা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে তার গুলশানের আলিশান ৪টি ফ্ল্যাট ও ৩৩টি ব্যাংক একাউন্ট।
এতো সম্পদ কীভাবে গড়লেন বেনজীর, তা জানতে ৬ জুন তলব করা হয়েছে তাকে। স্ত্রী ও সন্তানকে ডাকা হয়েছে ৯ জুন। অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্টের পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দুর্নীতির সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন বেনজীর। এরপর আর এ বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি। এমনকি তাকে প্রকাশ্যেও দেখা যাচ্ছে না। সম্পত্তি জব্দের পর তার আইনজীবী গণমাধ্যমে কথা বললেও গত কয়েকদিন ধরে তিনি কিছুই বলছেন না। এমনকি সাংবাদিকরাও তাকে পাচ্ছেন না। এতেই প্রশ্ন উঠছে — বেনজীর দেশে আছেন তো?
বেনজীর আহমেদ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই। সরকারি দল শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, কারো দুর্নীতির রক্ষা কবজ হবে না তারা। সব চলবে আইনি ধারায়। বিরোধীদের আশঙ্কা, দুদকের মাধ্যমে ক্লিনশিট দেয়া হতে পারে বেনজীরকে।
বেনজীর ইস্যু ভবিষ্যতে কোন্ দিকে যায়, তা হয়তো সময় বলে দেবে। কিন্তু বেনজীরের ক্ষেত্রে যাতে পিকে হালদার অথবা বাচ্চুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে এখনি পদেক্ষপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান মনে করছেন, বেনজীরের ক্ষেত্রে সঠিক একটা অনুসন্ধান হওয়া দরকার এবং এর অগ্রগতিও দুমাস পর হাইকোর্টে দাখিল করা দরকার। তাহলে এমন যারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন, তারাও সতর্ক হবেন।
যদিও দুদক বলছে, দুর্নীতিবাজদের বিচার নিশ্চিত করার সব পথেই হাঁটবে তারা।