29 C
Dhaka
Friday, June 28, 2024

‘জমিটুকু খুব কষ্টে ধরে রাখছিলাম, কিন্তু সেটাও কেড়ে নিয়েছে বেনজীর’

‘আমরা জমি দিতে চাইনি। ভয় দেখিয়ে জমি লিখে নেন বেনজীর। এই জমিতে ফসল হতো। লিখে নেওয়ার পর আমাদের চাষাবাদ করার আর কোনো জমি নেই। এই ফসলি জমিটুকু অনেক কষ্টে ধরে রাখছিলাম, কিন্তু সেটারও আর শেষ রক্ষা হলো না।’

এভাবেই নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জমি আত্মসাত করার বর্ণনা দিয়েছেন মাদারীপুরের রাজৈরে সাতপাড় ডুমুরিয়া গ্রামের সরস্বতী রায়।

অবসরে যাওয়ার আগে সংখ্যালঘুদেরকে অত্যাচার ও ভয় দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে মাদারীপুরের রাজৈরে স্ত্রী জিশান মির্জার নামে ২৭৬ বিঘা জমির সিংহভাগই কিনেছেন বেনজীর আহমেদ। ২০২১ ও ২০২২ সালের বিভিন্ন সময় রাজৈর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের ডুমুরিয়া মৌজায় ১১৩টি দলিলে এসব জমি তিনি কিনেছেন। জমিগুলোর দলিলমূল্য মোট ১০ কোটি ২২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। বিঘা প্রতি জমির দাম পড়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। তবে এসব জমির বাজারমূল্য এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

আরো পড়ুন  গরু মাফিয়া সাদিক এগ্রোর ইমরান

রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ভাষারাম সেন বলেন, ‘২৪ একর ৮৩ শতাংশ ফসলি জমি আমাদের বংশীয় লোকেদের। সবটুকু জমি কিনেছেন বেনজীর আহমেদ। বিঘাপ্রতি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রায় দুই বছর আগে ভয়ভীতি দেখিয়ে এই জমি কিনে নেন তিনি। এ জন্য কৌশলে তিনি প্রথমে চারদিক থেকে জমি কিনে নেন, তারপর মাঝখানে আমাদের জমি থাকায় সেটা লিখে দিতে বাধ্য করেন।’

আরো পড়ুন  ধর্ষণ ও ভ্রূণ হত্যা মামলায় সেই ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে

বড়খোলা গ্রামের বাসিন্দা রসময় বিশ্বাস বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ আমাদের কাছ থেকে ৩২ শতাংশ জমি নিয়েছেন।’

একই কথা জানান পার্শ্ববর্তী কদমবাড়ি এলাকার সুকদেব বালার ছেলে অমল বালা। তিনি বলেন, ‘আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন বেনজীরের লোকজন। তার লোকজন বলেছে, জমি লিখে না দিলে বিমানে করে বাড়িতে নামতে হবে। চারপাশ আটকে দেব। এমন অত্যাচারে অনেকেই জমি লিখে দিয়েছেন।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, বেনজীর আহমেদের কাছে যারা জমি বিক্রি করতে চাননি তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

আরো পড়ুন  ‘নিজে বাঁচলেও মা-বোনকে বাঁচাতে পারলাম না, মইরা যাওয়া ভালো ছিল’

তারা জানায়, বেনজীরের এসব কাজে সাহায্য করেছেন তৈয়ব আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি এলাকায় পুলিশের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রাজৈরে ১১৩টি দলিলে ২৭৬ বিঘা জমি কেনা ছাড়াও এর আগে শিবচর ঠেঙ্গামারা মৌজায় ২০১৫ সালে পাঁচ কাঠা জমি কেনেন বেনজীর আহমেদ।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বেনজীর আহমদ ও তার পরিবার। দুদকের শুধু অবৈধ সম্পদের হিসাব নিলেই হবে না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে তিনি যে জঘন্য অপরাধ করেছেন, তার বিচারও হওয়া দরকার।’

সর্বশেষ সংবাদ