পারভীন কানাডায়, আরিফুল জাপানে। এরমধ্যে কিছুটা বিরতি। যদিও তা বেশিদিন ছিল না। জাপান থেকে দফায় দফায় আবারও পারভীনের সঙ্গে যোগাযাগ করেন আরিফুল। চাপ দিতে থাকেন দেশে ফেরার জন্য। অন্যথায় গোপন ভিডিও স্বামী ও স্বজনদের কাছে পাঠানোর হুমকি দিতে থাকেন। কথা না শোনায় কিছু ভিডিও পারভীনের স্বামীর কাছে পাঠিয়েও দেন। তারপরই পারভীন সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশে আসার এবং আরিফুলকে হত্যার। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জাপানপ্রবাসী আরিফুল হত্যাকাণ্ড তদন্ত করতে গিয়ে এ তথ্য পাওয়ার দাবি পুলিশের।
১৬ মে কানাডা থেকে ঢাকায় এসে খিলক্ষেতের একটি হোটেলে ওঠেন পারভীন আক্তার। তার ঢাকায় আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ১৭ মে ঢাকায় আসেন আরিফুল ইসলাম। ওই দিনই দুজন একসঙ্গে বসুন্ধরার মাটি প্রোপার্টিজের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন। দেশে আসার আগেই অনলাইনে ফ্ল্যাটটি সাতদিনের জন্য ভাড়া করেছিলেন আরিফুল।
১৮ মে ভোরে পারভীন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে একাই বের হয়ে যান। অ্যাপার্টমেন্টে ওঠার ১৫ দিন পর আরিফুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সঙ্গে একটি চিরকুট। আর সেই চিরকুটে খুনের দায় স্বীকার পারভীনের।
২৪ ঘণ্টার কিলিং মিশন শেষে ওইদিনই অর্থাৎ ১৮ মে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি বিমানে কানাডার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন পারভীন। আরিফুল হত্যার তদন্তের অংশ হিসেবে পারভীনের বাবা নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। মেয়েকে ফোন করে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সব স্বীকার করেছেন।
জানা যায়, আরিফুল, পারভীন ও তার স্বামী নাজমুল হাসান বাবুর বাড়ি নরসিংদীতে। ২০১৬ সালে নরসিংদীর ঘোড়াদিয়া এলাকার নাজমুল হাসান বাবুর সঙ্গে বিয়ে হয় পারভীনের। এরপর তার স্বামী কানাডায় চলে যান। তখন নরসিংদীর একটি কলেজে লেখাপড়া করার সময় আরিফুলের সঙ্গে পরিচয় হয় পারভীনের। ধীরে ধীরে আরিফুলের সঙ্গে গড়ে উঠা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। তারা বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকতে শুরু করেন। আর এই সুযোগে আরিফুল তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ধারণ করে রেখে দেন।
একটা সময় পারভীন এ সম্পর্ক থেকে বের হতে চেষ্টা করেন। তখন আরিফুল গোপন ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখান। এভাবে দিনের পর দিন মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে জানায় পারভীন। তারা বাবাকে বলেন, বাধ্য হয়ে আরিফুলকে নিয়মিত টাকা দেয়া লাগত।
এরমধ্যে বছরখানেক আগে আরিফুল জাপানে চলে যান এবং জাপানি তরুণীকে বিয়ে করেন। এরপর তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ বছরের শুরুর দিকে আবার যোগাযোগ শুরু করেন আরিফুল। কানাডা প্রবাসী পারভীনের স্বামী নাজমুলের কাছে কিছু গোপন ভিডিও পাঠান। এসব দেখার পর শুরু হয় কলহ। এসব ঘটনায় পারভীন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবুও সবকিছু ভুলে ভালোভাবে সংসার করতে ২ এপ্রিল কানাডায় স্বামীর কাছে চলে যান পারভীন। কিন্তু আরিফুল তাকে নিয়মিত ফোন এবং হুমকি দেন। এরপর পারভীন সিদ্ধান্ত নেন দেশে আসার। চিন্তা করেন আত্মহত্যারও।
যদিও পারভীন জানতেন না আরিফুলও দেশে আসবে। এরপর আরিফুলের সাথে দেখা হওয়ার পর তিনি আরিফুলের কথা মতো বসুন্ধরার ভাড়া করা বাসায় উঠেন এবং আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত বদলে আরিফুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, চিরকুটের হাতের লেখার সঙ্গে অ্যাপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রারে থাকা পারভীনের হাতের লেখার মিল পাওয়া গেছে। তারপরেও আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া একটি কাবিননামা পাই, সেখানে থাকা পারভীনের স্বাক্ষরের সাথেও প্রাথমিকভাবে মিল পাওয়া গেছে। এখন ইন্টারপোলের মাধ্যমে পারভীনকে দেশে আনার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।