‘আমার একটা ছেলে। আমি আমার ছেলে ছাড়া আর কেউ নাই। আমার ছেলেকে ওরা কীভাবে মারলো? আমার ছেলেটা কই? সোনার টুকরাটা কই? আমার কলিজাটা আর আমার কাছে আবদার করবে না। এবার কোরবানির ঈদে বোনাস পেয়ে আমাকে টাকা দিবে বলেছিল। আমার ছেলে আর আমার সাথে কথা বলবে না।’
সোমবার (১০ জুন) ছেলের জন্য আহাজারি করতে করতে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান চট্টগ্রাম নগরীতে মোটরসাইকেলের হর্ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত পোশাককর্মী মনিরুজ্জামান রাফির মা জান্নাতুল ফেরদৌস। নিহত রাফি বন্দর থানার মধ্যম হালিশহরের বাকের আলী ফকিটের টেক ইসমাইল মালুমের বাড়ির মোহাম্মদ রফিকের ছেলে।
নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর জোন) সাকিলা সোলতানা জানান, রাফির খুনের সঙ্গে জড়িতরা কিশোর গ্যাং সদস্য। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার আকবর বাড়ির জাহিদুল ইসলাম (২২), নগরের কোতোয়ালী থানার কাজির দেউড়ি এলাকার মোবারক হোসেন (২৩), সন্দ্বীপ উপজেলার মাইঠভাঙা এলাকার ইকবাল হোসেন ইমন (২২), নগরের পতেঙ্গা থানার মাইজপাড়া এলাকার শাহরিয়ার আল আহমেদ (২০), একই থানা এলাকার উত্তর পতেঙ্গা আবুল বাশারের বাড়ির জোবায়ের বাশার (৩৪), বন্দর থানার গোসাইলডাঙ্গা এলাকার তাহরিয়ার আহমেদ বাঁধন (২০) এবং হাটহাজারী থানার কাটিরহাট গ্রামের মো. মারুফ চৌধুরী (২১)।
ডিসি শাকিলা সোলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাফি খুনের সঙ্গে জড়িতদের কিশোর গ্যাং হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। কারণ যারা ঘটনাস্থলে ছিলো তারা বয়সে বেশিরভাগ কিশোর। তারা যে সময়টিতে সী-বিচে ছিল সেটি কোনোভাবেই বয়স হিসেবে উপযুক্ত ছিলো না। তারা সী-বিচে গিয়েছিলো আনন্দ করতে। পূর্বপরিকল্পিত না হলেও যারা সেখানে গিয়েছিলো আমার মনে হয় তারা ভালো পরিবারের সন্তান না। আমার মনে হয় তারা কিশোর গ্যাং সদস্য।’
তিনি বলেন, ‘রোববার ভোর ৪টার দিকে আমাদের কাছে সংবাদ আসে দুটি পক্ষের মধ্যে মোটরসাইকেলের সাইলেন্সারের পাইপে উচ্চ শব্দে হর্ন দেওয়া নিয়ে মারামারি হয়। এ সময় ৪-৫ জনের যে গ্রুপটি ছিল তাদের ওপর ১০-১৫ জনের একটি গ্রুপ হামলা করে। তাদের কাছে ছুরিও ছিল। এ সময় ছুরিকাঘাতে আহত দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকাল ৯টার দিকে আহত ভিকটিম মনিরুজ্জামান রাফি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এটি তাৎক্ষণিক সৃষ্ট একটি ঘটনা। দুপক্ষই ঝগড়া করেছে।’