27 C
Dhaka
Monday, July 1, 2024

শিশু হামজার কাঁধে ৭ সদস্যের সংসারের হাল, জানাল নিজের ইচ্ছার কথা

দেশে শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ দারিদ্র্য। অভাবের সংসারের দায়িত্ব নিতে কিংবা নিজের খাবার জোগাতে শিশু-কিশোররা যুক্ত হয়ে পড়ছে কায়িক শ্রমে। যে বয়সে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাবার কথা সেই বয়সে দারিদ্র্যের গোলক ধাঁধাঁয় পথ হারিয়ে কায়িক পরিশ্রমের কাজে বাধ্য হচ্ছে শিশুরা।

তাদের মধ্যে এমনি একজন আমির হামজা। চার বোন মাসহ ৭ জনের পরিবার। বয়স সবেমাত্র ১৩ বছর। পরিবার, জীবন, সমাজ কী- সেটার বুঝে ওঠার আগেই মাথায় চেপে বসেছে আকাশ সমান দায়িত্ব। অথচ এ বয়সে তার হাতে থাকার কথা ক্লাসের বই, ঘুরে বেড়ানোর কথা বন্ধুদের সঙ্গে, মেতে ওঠার কথা খেলার মাঠে- সেই বয়সেই তাকে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে পরিবারের দায়িত্ব।

আরো পড়ুন  জিপিএ-৫ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

চতুর্থ শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে নোয়াখালী থেকে চলে এসেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ালেখা করতে নয়, এসেছে হলের ক্যান্টিনে কাজ করতে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষার্থীরা আসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে সেখানে ক্যাফেটিরিয়ার থালা-বাসন আনা-নেয়া করতে সময় পার হয় তার। সুযোগ পেলে সেও কাজের ফাঁকে শুরু করতে চায় পড়াশোনা।

ছয় ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম সে। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা যিনি পেশায় একজন মাঝি। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির এ সময়ে বাবার আয় দিয়ে সংসার চলে না তাদের। তাই পরিবারের হাল ধরতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ইসলাম হলের ক্যান্টিনে কাজ করতে হচ্ছে। এতে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে তার।

আরো পড়ুন  আ.লীগ নেতাদের হারিয়ে সাহেদের চমক

পারিবারিক আর্থিক দুর্দশা বিবেচনা করে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে চায় না সে। শুধু সে নয়, তার মতো আরো পাঁচ-ছয় জন অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশু-কিশোররা কাজ করছে হলের ক্যান্টিনগুলোতে। তাদের গল্পগুলোও অনেকটা একই রকম। বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুসারে, অনুর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসেবে বিবেচিত। আর তাদের দিয়ে কাজ করানো কিংবা কাজে বাধ্য করানো অপরাধের শামিল, রয়েছে শাস্তির বিধান।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে, দেশে অন্তত ১৭ লাখ শিশু রয়েছে- যারা বিভিন্ন কারণে শিশুশ্রমে নিয়োজিত। এদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১ দশমিক ২ মিলিয়ন বা ১২ লাখ শিশু। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মতে দেশে শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা আরও বেশি। ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের আইন থাকলেও তা বন্ধে এবং নিরুৎসাহিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নেই। এতে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আরো পড়ুন  বাবার মৃত্যুর আধাঘণ্টা পর মেয়ের আত্মহত্যা তারপর...

বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছে ‘আলোকিত মানুষ’ নামের একটি সংগঠন। সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র, অসহায়, ছিন্নমূল ও পথশিশুদের পাঠদানের পাশাপাশি শিশুদের খাতা-কলম, পোশাক, শীতের পোশাক বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবার ওপর পরিচালিত এ সংগঠনের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংঘটনটির সদস্যরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ছিন্নমূল শিশুদের নিয়মিত পাঠদান দেয়া হয়।

সর্বশেষ সংবাদ