ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছাত্রীকে গণধর্ষনের মামলায় পলাতক এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০। বুধবার (১৯ জুন) ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানাধীন নাকোল এলাকায় মামলার প্রধান আসামি সোহান ওরফে টেরা সোহানকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামি সোহান মধুখালীর গোন্দারদিয়া গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে মধুখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১০, সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক লে: কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফরিদপুরের মধুখালী এলাকায় বসবাসকারী ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী (১৩) গত ২৮ মে সকাল আনুমানিক ৯ টার দিকে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। পরবর্তীতে স্কুল ছুটি হওয়ার পরও সে বাড়িতে না ফিরলে তার পিতাসহ পরিবারের লোকজন নিকটাত্মীয় স্বজনদের বাসায় এবং বিভিন্ন জায়গায় খুঁজাখুঁজি করতে থাকেন।
খুঁজাখুঁজি করে কোথায় তার কোনো সন্ধান না পেয়ে মেয়েটির পিতা মধুখালী থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এরপর গত ২ জুন মধুখালী থানায় একটি বাজারে মেয়েটিকে খুঁজে পায় পরিবার ও স্থানীয়রা।
পরিবারের লোকজন তাকে নিখোঁজের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় গত ১ জুন মধ্যরাতে আসামি তুহিন অজ্ঞাত আরো ২ জন ব্যক্তির সহযোগীতায় তাকে বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে তুহিনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় একটি কক্ষের ভিতরে সোহান ও অন্তর অবস্থান করছে। এরপর তাকে কক্ষের ভিতরে নিয়ে আসামি তুহিন, সোহান ও অন্তর মিলে জোরপূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার পর মেয়েটি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবারের লোকজন তাকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেন। এ ঘটনায় মেয়েটির পিতা বাদী হয়ে ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানায় ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রী (১৩)’কে অপহরণ করে গণধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ধর্ষক সোহান, তুহিন ও অন্তরসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২ জনের বিরুদ্ধে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিষয়টি জানতে পেরে সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। এই গণধর্ষণের ঘটনা ফরিদপুরসহ পুরো দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
ওই কিশোরী জানায়, প্রায় দেড় মাস আগে সে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য গেলে একপর্যায়ে অন্তর জামান অন্তু এবং তুহিন বিশ্বাস নামে দুই ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা দুজন ওই কিশোরীকে সাহায্যের নামে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর ওই কিশোরীকে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখে। ধর্ষণের ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার নাম করে দীর্ঘদিন অন্তু এবং তুহিন কিশোরীকে জিম্মি করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করতে থাকে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্তু এবং তুহিন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করলেও তারা মাদকসেবী। সে সূত্রে মাদক কেনাবেচার সময় মাদক কারবারি গ্রেপ্তারকৃত সোহান শাহের কাছ থেকে ফ্রি মাদক পেতে ভুক্তভোগী কিশোরীর আপত্তিকর অবস্থার ছবি সোহানকে দেয় অন্তু এবং তুহিন। এরপর মাদক ব্যবসায়ী সোহান কিশোরীকে ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে আসছিল।
র্যাব-১০, সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক লে: কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার আরো জানান, ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী ১৩ বছরের কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সকল আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে সাড়ে ৬টার দিকে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগীতা ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানাধীন নাকোল এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে গণধর্ষণ মামলার এজাহারনামীয় পলাতক অন্যতম প্রধান আসামি সোহান ওরফে টেরা সোহানকে (২৫) গ্রেপ্তার করে।