দীর্ঘ ৪৪ বছর কারাগারে থাকা এবং তিন দশকে ২৬ আসামির ফাঁসি কার্যকর করা আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (২৪ জুন) ভোরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে তার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আহাদ আলী জানান, জল্লাদ শাহজাহানকে অসুস্থ অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত বছরের ১৮ জুন বেলা ১১টা ৪৬ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন জল্লাদ শাহজাহান। কিন্তু জীবনের চার দশকেরও বেশি সময় কারাভোগ করে মুক্তির ভালো ছিলেন না তিনি। এক আলাপে ছোট ও বড়পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ফারুক আহমেদকে এমনটাই জানিয়েছিলেন আলোচিত এই জল্লাদ।
এ ব্যাপারে এদিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন অভিনেতা ফারুক। পোস্টে জল্লাদ শাহজাহানের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রপাত তুলে ধরে তার সঙ্গে আলাপচারিতার কিছু অংশ উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে তার মৃত্যুতে শোক জানান এ অভিনেতা।
ফারুক আহমেদ তার পোস্টে লিখেছেন, ‘এ বছর বই মেলায় কিংবদন্তী পাবলিকেশন’স থেকে তার (শাহজাহান ভূঁইয়া) লেখা একটা বই প্রকাশ হয়েছিল। বইটির নাম “কেমন ছিলো জল্লাদ জীবন”। মেলার কিংবদন্তী প্রকাশনীতে আমার লেখাও একটি বই ছিল। বই মেলার প্রায় ১৫ দিন আমি কিংবদন্তী স্টলে বসেছি। জল্লাদ শাহজাহানের সঙ্গে আমার কিংবদন্তীর স্টলেই পরিচয়।’
‘তার দীর্ঘ জেল জীবন, জল্লাদ হওয়ার গল্প, ফাঁসি দেয়ার সময় তার মনের অবস্থা, ফাঁসির সময় আসামির ক্রিয়া―এসব বিষয় তার কাছে জানতে চেয়েছি। সে খোলামেলাভাবে আমার কথার উত্তর দিয়েছে। একদিন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “মুক্ত জীবন কেমন লাগছে?” সে মাথা নিচু করে বলল, “ভালো না। আমার কেউ নাই। কিচ্ছু নাই। ভালো লাগে না।” আমি বোকার মতো তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আহারে জীবন!’
এ অভিনেতা আরও লিখেছেন, ‘জীবনের ৪০ বছরেরও বেশি সময় জেলের চার দেয়ালের ভেতর কাটিয়ে মুক্ত জীবন পেয়েও বলে ভালো লাগে না! আমি তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, “কি করলে আপনার ভালো লাগবে?” সে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো, “মরে গেলে।” ’
এছাড়া সবশেষ ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘জল্লাদ শাহজাহান আজ দুপুরে মরে গেছে। তার চাওয়া পূরণ হয়েছে। ওপারে ভালো থাকবেন জল্লাদ শাজাহান।’