22 C
Dhaka
Friday, November 22, 2024

‘তোমাকে দাফন করলাম, তুমি কোথা থেকে এলে?’

দাফনের ৯ দিন পর বাড়ি ফিরলেন নিখোঁজ তরুণী রোকসানা আক্তার (৩০)। এ নিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, রোকসান তোমাকে দাফন করলাম, তুমি এখন এলে কোথায় থেকে?

বুধবার (২৬ জুন) ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর গ্রামে। রোকসানা আক্তার ওই গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের মেয়ে। অপরদিকে ফিরে আসা তরুণীকে এক নজর দেখতে উৎসুক মানুষ তার বাড়িতে ভিড় জমায়।

শনিবার (২৯ জুন) রাতে জানা গেছে, মে মাসের শেষে রোকসানা আক্তার বাড়ি থেকে ছোট ভাই সালাহ উদ্দিনের চট্টগ্রামের ষোলশহরের বাসায় বেড়াতে যান। ১ জুন ভোরে কাউকে না জানিয়ে রোকসানা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন আত্মীয়স্বজনসহ সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন বিকেলে ফেনী শহরে ভাড়া বাসায় অবস্থানরত খালাতো বোন হাজেরা আক্তার ও খালাতো ভাই শাহজাহান খবর পান, ফেনী শহরের জিয়া মহিলা কলেজের সামনে ড্রেনের মধ্যে একজন নারীর লাশ পড়ে আছে। তারা সেখানে গিয়ে লাশের চেহারা রোকসানা আক্তারের চেহারার সঙ্গে মিল দেখে ভাই এবায়দুল হককে খবর পাঠান। এরই মধ্যে ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ লাশটির সুরতহাল শেষে উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। রাতে এবায়দুল হক জিয়া মহিলা কলেজের ড্রেন এলাকায় পৌঁছে আশপাশের মানুষকে বোনের ছবি দেখিয়ে লাশটি একই রকম কিনা জিজ্ঞেস করলে সবাই ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে বলে জানান।

আরো পড়ুন  রোগীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসক আটক

পরে এবায়দুল হকসহ আত্মীয়-স্বজনসহ ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধারকারী উপপরিদর্শক প্রতুল দাসের সঙ্গে দেখা করে বোন রোকসানার ছবি দেখান। উপস্থিত পারস্পরিক আলোচনায় উপপরিদর্শক প্রতুল দাসকে তারা রোকসানার লাশ শনাক্ত করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ এবায়দুল হকের হাতে বোন রোকসানা আক্তারের লাশ হস্তান্তর করে। ওইদিন বাদ আসর গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লবপুর মধ্যমপাড়ায় সামিশকরা দীঘির দক্ষিণ পাড়ে তার লাশ দাফন করা হয়।

আরো পড়ুন  লঞ্চে সন্তান প্রসব, মা-নবজাতকের আজীবন ভাড়া ফ্রি

লাশ দাফনের ৯ দিন পর গত ২৬ জুন বুধবার বিকেলে ঘটে বিপত্তি। হঠাৎ ‘দাফন করা’ রোকসানা সশরীরে বাড়িতে হাজির হলে আৎকে উঠেন সবাই। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জানাজানি হলে বাড়ির উঠানে আশেপাশের উৎসুক মানুষ তাকে একনজর দেখতে ভিড় জমায়। এ সময় নারী-পুরুষ তাকে একবাক্যে জিজ্ঞেস করে, রোকসান তোমাকে দাফন করলাম, তুমি কোথায় থেকে আসলে? তখন সে বলতে থাকে, কে বলছে আমি মারা গেছি? আমি ঢাকায় ঘুরতে গেছিলাম। শরীর খারাপ থাকায় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। উল্টো এখন রোকসানাই ভাই এবায়দুল হক ও সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করছে, আমাকে ভেবে তোমরা কোন নারীকে দাফন করেছ, কি তার পরিচয়?

ফিরে আসা রোকসানা আক্তার বলেন, আমি চট্টগ্রামে ভাইয়ের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমি একটি চাকরি পেয়েছি। যেহেতু আমি বাড়ি থেকে কোনো কাপড় নিয়ে যাইনি, তাই কাপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে ফিরে আসি। ২৬ জুন বুধবার বাড়িতে এসে দরজা নক করলে আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে দেখে হতবাক হয়েছেন। তখন আমি জানতে পারি, আমি নাকি মারা গেছি এবং আমার লাশও দাফন করা হয়ে গেছে। আমিতো জীবিত ফিরে আসলাম।

আরো পড়ুন  বদলির পর আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক প্রতুল দাস শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, উদ্ধার করা লাশটি বিকৃত ছিল। এবায়দুল হক ও তার স্বজনরা উদ্ধারকৃত লাশটি রোকসানার বলে শনাক্ত করে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। এখন যেহেতু তাদের বোন সশরীরে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে, তাই আমরা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করব।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, তরুণী নিখোঁজ, উদ্ধার, দাফন ও আবার ফিরে আসার বিষয়ে কেউ আমাকে অবগত করেনি। খবর নিয়ে দেখব-আসলে কি ঘটেছে।

সর্বশেষ সংবাদ