26 C
Dhaka
Friday, December 6, 2024

হেফাজতের অফিস নিয়ে টানাটানি

২০১০ সালে চট্টগ্রাম থেকেই যাত্রা শুরু করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শুরু থেকেই হাটহাজারী মাদ্রাসা নামে পরিচিত জামিয়া আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামকে ঘিরে পরিচালিত হচ্ছে সংগঠনটির সব কার্যক্রম। কাগজপত্রে এই মাদ্রাসাকেই অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় উল্লেখ করা হচ্ছে।

তবে ১৪ বছর পর কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ে হেফাজত নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতভিন্নতা। সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের সুবিধা বিবেচনায় রাজধানী কেন্দ্র করে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার পক্ষে ঢাকা ও আশপাশের জেলাকেন্দ্রিক শীর্ষ নেতারা। গত মে মাসে সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ার পর বিষয়টি নতুনভাবে আলোচনায় আসে। তবে কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থানান্তরের এই প্রস্তাব মানতে রাজি নন চট্টগ্রাম বিভাগের নেতারা।

হেফাজত নেতাদের একটি অংশের মত হলো, হাটহাজারী মাদ্রাসাকে ঘিরেই অরাজনৈতিক এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। সেখান থেকেই সারা দেশে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে উঠেছে। ফলে চট্টগ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে অন্য নেতাদের মতে, কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজধানী থেকে দূরে হওয়ায় বিভিন্ন ইস্যুতে সভা আহ্বান বা জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। সংগঠন জোরদার করতে হলে ঢাকাকে কেন্দ্র করেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জায়গা চূড়ান্ত করতে মাসখানেক আগে হেফাজতের কয়েকজন নেতা মগবাজার এবং পুরানা পল্টন এলাকায় একাধিক ভবন পরিদর্শন করেছেন। আগস্টের মধ্যেই ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করতে চান তারা।

আরো পড়ুন  এমপক্সসহ যাবতীয় ভাইরাস থেকে বাঁচার দোয়া

ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। প্রায় একশটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মরহুম শাহ আহমদ শফী। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা ব্যবহৃত হচ্ছে। দলের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীও সেখানেই থাকেন। শুরু থেকে সম্পৃক্ত বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসা চট্টগ্রাম অঞ্চলেই। এ কারণে সংগঠনের গঠনতন্ত্রেও কেন্দ্রীয় কার্যালয় চট্টগ্রামে রাখা হয়। অবশ্য প্রথমদিকেই ঢাকার বারিধারার একটি মাদ্রাসায় মহাসচিবের কার্যালয় করা হয়। পরে সেটি খিলগাঁওয়ের মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় স্থানান্তর করা হয়। হেফাজতের মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমান মাঝেমধ্যেই সেখানে অফিস করেন।

তবে যে কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় সভা আহ্বান করা হয়। এমনকি জরুরি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলেও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের চট্টগ্রামে যেতে হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেসব সভায় যোগদান করা অনেকের পক্ষেই কঠিন হয়ে পড়ে। আবার বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ কারণেই শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তর করতে চাইছেন। এরই মধ্যে তারা এ বিষয়ে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। সুবিধাজনক এলাকায় জায়গা খোঁজা হচ্ছে। সবকিছু চূড়ান্ত করে আগস্টের মধ্যেই তারা ঢাকায় নতুন কার্যালয় চালু করতে চান।

আরো পড়ুন  সৌদি পৌঁছেছেন ১৬ হাজার হজযাত্রী

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের অনুসারী। তবে তাদের কেউ বিষয়টি নিয়ে এখনই গণমাধ্যমে কথা বলতে চান না।

তিন বছর কারাগারে থাকার পর গত ৩ মে মুক্তি পান মাওলানা মামুনুল হক। ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে ঘোষিত হেফাজতের কমিটিতে তাকে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে কারাবন্দি অন্য নেতাদের সঙ্গে মামুনুল হকেরও মুক্তি দাবি করে হেফাজত। কারামুক্ত হওয়ার পর তাকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে পুনর্বহালের প্রক্রিয়া চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, কারামুক্তির পর এখন পর্যন্ত হেফাজতের কোনো কর্মসূচিতে উপস্থিত হননি মামুনুল হক। তিনি নানা ভাগে বিভক্ত ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। এসব দলকে একটি প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে চান মামুনুল হক। সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য। অবশ্য একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে এ বিষয়ে কথা বলার পর সরকারের দিক থেকে মামুনুল হককে চাপে রাখা হয়েছে বলেও দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

আরো পড়ুন  ৯৪ দিনে কোরআন শরীফ মুখস্থ করল ৯ বছরের নুসাইব

গত সোমবার দুপুরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায় জামিয়া রহমানিয়া আজিজিয়া মাদ্রাসা কার্যালয়ে মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এ প্রতিবেদক। এ সময় তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা, উদ্যোগ, হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তরসহ নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন মিডিয়ার সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলছি না। কাউকে সাক্ষাৎকারও দিচ্ছি না।’

হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে সংগঠনের মহাসচিব সাজিদুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী গত সোমবার কালবেলাকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তরের বিষয়ে সম্প্রতি নতুন কোনো আলোচনা হয়নি। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় হেফাজতের মহাসচিবের কার্যালয় রয়েছে। প্রায়ই সেখানে সভা হয়।’

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস কালবেলাকে বলেন, ‘হেফাজতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যাল

সর্বশেষ সংবাদ