২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফার ভিত্তিতে সারাদেশে দিনব্যাপী অনলাইন ও অফলাইনে জনসংযোগ চালাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। কর্মসূচির প্রথম দিন জনসংযোগে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে সংহতি প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩টি বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (৫জুলাই) পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সম্মতি নিয়ে ‘এ ঘোষণা দেয় বিভিন্ন বিভাগ ও ব্যাচের ক্লাস প্রতিনিধিরা। আগামী রোববার থেকে তারা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে এ কর্মসূচি পালন করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইভেট ফেসবুক গ্রুপ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন সংক্রান্ত কর্মসূচিতে নিজ নিজ ব্যাচের সমর্থনের কথা জানিয়ে জনসংযোগ চালিয়ে জাচ্ছেন ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪টি বিভাগ ও ১৩টি ইন্সটিটিউটের প্রতিটি বিভাগে ৫টি করে ব্যাচ চলমান রয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে বিভাগ ও ইন্সটিটিউট মিলে ক্লাস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে সংহতি জানানোর সংখ্যা ৬৩টি। অধিকাংশ বিভাগের সকল ব্যাচ সংহতি প্রকাশ করেছে। আবার অনেকে বর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ফলে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
চলমান সকল ব্যাচ সংহতি জানিয়েছে এমন বিভাগ ও ইন্সটিটিউট সংখ্যা ৪৭টি। বিভাগসমূহ হলো, ইতিহাস বিভাগ, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন, বাংলা, ইসলামিক স্টাডিজ, আরবী, সংস্কৃত, লোকপ্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, জাপানিজ স্টাডিজ, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা, অপরাধ বিজ্ঞান, পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ, ভাষাবিজ্ঞান, পপুলেশন সায়েন্সেস, সংগীত, চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ, অর্গানাইজেশন স্ট্রাটেজি এন্ড লিডারশীপ, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন ও নৃত্যকলা বিভাগ।
এছাড়াও রয়েছে পদার্থবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, ফলিত গণিত, সমুদ্রবিজ্ঞান, বোটানি, প্রাণিবিদ্যা, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ, ডিজাস্টার সাইন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স, রসায়ন, গণিত, মৎস্যবিজ্ঞান, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুইরেন্স, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, হিসাব বিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। পাশাপাশি ইন্সটিটিউটের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট ও সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট।
অন্যদিকে কোনো কোনো বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন ব্যাচ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে এমন সংখ্যা ১৬টি। ব্যাচসমূহ হলো, ইংলিশ ফর দ্য স্পিকার্স অব আদার ল্যাংগুয়েজের ৬, ৭ ও ৮তম, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসের ১৪, ১৭ ও ১৮তম, নৃবিজ্ঞানের ২৮,২৯,৩০ ও ৩১তম, ফুটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৩৯,৪০ ও ৪১তম, ভূগোল ও পরিবেশের ৬৬, ৬৭ ও ৬৮তম, উন্নয়ন অধ্যয়নের ১৪,১৫ ও ১৬তম, পরিসংখ্যানের ৭০, ৭১ ও ৭২তম টেলিভিশন, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭তম, মনোবিজ্ঞানের ৫৬, ৫৭ ও ৫৮ তম, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের-৯ ও ১১তম, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফির ৯ ও ১০তম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৩, ১৪ তম ব্যাচ, লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৪০তম, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৪০তম আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ৭৪তম, আবহাওয়া বিজ্ঞানের ২য় ব্যাচ।
হাইকোর্টের মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায়ের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাসড়কে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে গতকাল ৪ জুলাই শাহবাগে টানা তৃতীয় দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’এর মুখপাত্র নাহিদ হাসান।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে শুক্রবার (৫ জুলাই) অনলাইনে অফলাইনে চার দফার ভিত্তিতে সারাদেশে জনসংযোগ ও সমন্বয় করেছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৬ জুলাই) বিকাল ৩টায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। আগামী রোববার (৭জুলাই) সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট করা হবে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা আজকে অনলাইন এবং অফলাইনে জনসংযোগ চালিয়েছি। ঢাবি থেকে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। এ পর্যন্ত ৪৭টি বিভাগের সকল ব্যাচ আমাদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। এ সংখ্যাটি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ এখনো অনেক ব্যাচ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি। এমনকি আনন্দমোহন কলেজ থেকেও ক্লাস বর্জনের কথা আমরা জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত পুরো দেশের চিত্রের হিসেব আমাদের হাতে পৌছায়নি।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দদাবিগুলো হলো-
১। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২। ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ছাড়া);
৩। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
৪। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।