সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এখন অনেকটাই ‘আবেদময়’। প্রতি স্ক্রলেই সামনে আসছে গাড়িতে, বিমানে এবং বাইরে দাঁড়িয়ে-বসে পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীর নামাজ আদায়ের ছবি। এরইমধ্যে ভাইরাল হয়েছে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি-পেজ এবং বড় ছেলে সিয়ামের ভেরিফাইড পেজ থেকে পোস্ট করা নীতিবাক্য ও ধর্মচর্চার বিভিন্ন বিষয়ও।
আবেদ আলীর ফেসবুক পেজ থেকে ছবির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যার ক্যাপশনে তিনি লেখেন— ‘আমার জীবনে কোনদিন অসদুপায় অবলম্বন করিনি। গায়ে খেটে ভাগ্য পরিবর্তন করেছি’। এই ভিডিওটি ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। আর কমেন্টেও মানুষজন নানান নেতিবাচক এবং ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করছেন।
হাবিবুর রহমান নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘চাচা ভিডিওটা ডিলিট দেন, নইলে একটু পরেই দেখবেন অটো ভাইরাল হয়ে গেসেন’। ফয়সাল আহমেদ নামের আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘চাচা, আপনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি’। মাহফুজুল আলম মিশকাত নামের আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এ যেন লালসালু উপন্যাসের মজিদ চাচার প্রতিচ্ছবি। ধার্মিক রূপ ধারণ করে এরা মানুষের কাছে বিশ্বাসী ও নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। মানুষও তাদের ধার্মিক রূপ দেখে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আপনারা একটু খেয়াল করলে দেখবেন বাংলাদেশের যেকোনো ব্যক্তি বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কোথাও ধার্মিকতার ছোঁয়া পেলে মানুষ সেখানে ব্যাপক আস্থা রাখে। সেই লেবাসধারী লোকদের কারণে আজ পুরো ধর্ম ও ধর্ম ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ’।
গাড়িচালক থেকে থ্রি স্টার হোটেলের মালিক আবেদ আলী!
এরপর তার নামাজ আদায়ের অনেকগুলো ছবিও ভাইরাল হয়েছে। যার অধিকাংশ গুলো নিয়েই এখন ব্যাপক ট্রল হচ্ছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এসব ছবির একটিতে ‘কাকা ওঠেন। একসেট প্রশ্ন ড্রপ করতে হবে’— এমন কমেন্ট দেখা যায়।
অবশ্য প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিপুল সম্পদের তথ্যও তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে। ঢাকার ভেতর তার দুটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান বাড়ি রয়েছে— এমন তথ্যও সামনে আসছে।
যদিও ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সিআইডির হাতে পুত্রসহ আটক হয়েছেন ফেসবুকে নীতিবাক্য বলে বেড়ানো আবেদ আলী। আর এ কারণে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদকের পদ হারিয়েছেন তার পুত্র সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।
প্রসঙ্গত, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিরুদ্ধে বিসিএসসহ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য সামনে আনা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন উপপরিচালক মো. আবু জাফর, উপ-পরিচালক জাহাঙ্গির আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান। বিপিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁস করে অর্থ লোপাটে মেতে উঠতো সংঘবদ্ধ চক্রটি।
প্রশ্নফাঁসকারী চক্রটি গত ৫ জুলাই (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাকে বেছে নেয়। এই পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির তথ্য ফাঁস করতে ছদ্মবেশ ধারণ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিক টিম। ছদ্মবেশী এক নিয়োগপ্রত্যাশী প্রার্থীকে তুলে দেওয়া হয় চক্রের সদস্যদের হাতে। এরপর ৫ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত যে প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, হোয়াটসঅ্যাপে তার একটা কপি পাঠানো হয় পরীক্ষার অন্তত এক ঘণ্টা আগে। আর অজ্ঞাত স্থানে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হয় আগের রাতেই।
বিষয়টি নজরে এলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে সিআইডি। এখন পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।