একযুগ ধরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার (৭ জুলাই) রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 24 এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাঁড়াশি অভিযানে নামে সিআইডি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আবু জাফর, উপ-পরিচালক, পিএসসি; নোমান সিদ্দিকী ; সৈয়দ আবেদ আলী, অবসরপ্রাপ্ত ড্রাইভার, পিএসসি ; খলিলুর রহমান, ডেসপাস রাইডার, পিএসসি ; সাজেদুল ইসলাম, অফিস সহায়ক, পিএসসি ; আবু সোলায়মান মো. সোহেল ; মো জাহাঙ্গীর আলম, উপ-পরিচালক, পিএসসি ; মো আলমগীর কবির, সহকারী পরিচালক, পিএসসি ; প্রিয়নাথ বায়, অডিটর; মো. জাহিদুল ইসলাম ; শাহাদাত হোসেন, নিরপত্তা প্রহরী, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নারায়ণগঞ্জ ; মো মামুনুর রশীদ ; মো. নিয়ামুন হাসান, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; সাখাওয়াত হোসেন ; সায়েম হোসেন ; লিটন সরকার ও সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁসের অনেক অভিযোগ আসতে শুরু করে। কয়েক বছর আগে থেকেই এসব অভিযোগের সূত্র মেলাতে শুরু করে চ্যানেল 24 এর অনুসন্ধানী দল। খোঁজ মেলে এমন এক ব্যক্তির, যিনি চক্রটির কার্যক্রম খুব কাছ থেকে দেখেছেন।
লাখো চাকরিপ্রার্থীর ভরসার প্রতীক বিপিএসসির নিয়োগ পরীক্ষায় এমন জালিয়াতির খবর শিউরে ওঠার মতোই। তবে চাক্ষুষ সাক্ষীর তথ্যগুলো মিলিয়ে নিতে বেছে নেয়া হয় গেল ৫ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাটিকে।
প্রস্তুতি শেষে ছদ্মবেশী প্রার্থীকে তুলে দেয়া হয় চক্রের সদস্যদের হাতে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত যে প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, হোয়াটসঅ্যাপে তার একটা কপি চ্যানেল 24 এর হাতে আসে অন্তত ১ ঘণ্টা আগে। আর অজ্ঞাত স্থানে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হয় আগের রাতেই।
প্রশ্নফাঁসের তথ্যের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বিপিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘উপপরিচালক হক মোহাম্মদ আবু জাফর স্যার ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ট্যাঙ্ক থেকে তাকে প্রশ্নপত্র দিয়েছেন। তিনি অবগত আছেন ৪৫তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে।’
এরপর প্রশ্নফাঁসের সব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনের মুখোমুখি হয় চ্যানেল 24। তিনি জানান, কমিশন ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনা প্রমাণ হলে, কমিশন বিবেচনা করবে, পরীক্ষা থাকবে কি, থাকবে না। শুরুতে গুজব মনে করলেও পরে বিব্রত হতে থাকেন সোহরাব হোসাইন।
এদিকে, দীর্ঘ অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
প্রসঙ্গত, বিপিএসসির কতিপয় কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিসিএসসহ অন্তত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করেছে চক্রটি। চাকরি পেয়েছে বহু অযোগ্য প্রার্থী। ফলে প্রজাতন্ত্রের কাজে দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মচারী নিয়োগের যে উদ্দেশে গঠিত হয়েছিল সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান, সেটিই এখন হুমকির মুখে।