আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে আরবের লোকরা তাদের কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দিত। কিন্তু বর্তমান যুগে তা কল্পনাও করা যায় না। তবুও এরকম এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বহনের সক্ষমতা না থাকায় ১৫ দিন বয়সী মেয়েকে জীবন্ত দাফন করেছেন এক বাবা।
জানা গেছে, মর্মান্তিক এই ঘটনায় অভিযুক্ত বাবাকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি নিজের অপরাধও স্বীকারও করেছেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এআরওয়াই নিউজ জানিয়েছে, রোববার সিন্ধু প্রদেশের থারুশাহতে নিজের ১৫ দিন বয়সী মেয়েকে জীবন্ত কবর দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধের দায়ে এক বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ওই বাবার নাম তৈয়ব।
নিজের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন, তিনি তার শিশু কন্যার চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলেন না। আর এ কারণেই নবজাতককে বস্তায় ভরে দাফন করেছেন।
পুলিশ অভিযুক্ত তৈয়বের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং তিনি ইতোমধ্যে তার অপরাধের স্বীকার করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশের পর নাবালিকা শিশুটির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হবে।
আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে কন্যাসন্তানের বাবা হওয়া ছিল ভীষণ লজ্জার বিষয়। সমাজে তার মুখ দেখানো হতো দায়। যে দায় এড়াতে আপন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে রাখতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতো না আরবরা!
তাদের এই অবস্থা তুলে ধরে কোরআনে কারিমের সুরা নাহলের ৫৮ ও ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে সে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে চেহারা লুকিয়ে রাখে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে রাখবে, না মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।
এটা ছিল ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের চিত্র, যেখানে ছিল না শিক্ষা-দীক্ষা। ওই সমাজে মানুষ হিসেবে কন্যা সন্তানদের কোনো সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না। জীবনের সব ক্ষেত্রে তারা ছিল অবহেলিত, উপেক্ষিত, লাঞ্ছিত।
বনি তামিম গোত্রের প্রধান কায়েস বিন আসেমের একটি করুন ঘটনা আছে। একবার তিনি নবী করিম (সা.)-এর দরবারে বসে কথাপ্রসঙ্গে তিনি নিজ হাতে কীভাবে তার নিজের জীবন্ত কন্যাকে মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করেছিলেন তার বর্ণনা দিয়েছিলেন। মেয়েটি কীভাবে বাবা বাবা বলে চিৎকার-ফরিয়াদ করছিল তার বর্ণনা দিয়েছিলেন।
বর্ণনা শুনে নবী করিম (সা.)-এর দু’চোখে অশ্রুধারা বয়ে চলছিল, তার দাড়ি মোবারক ভিজে গিয়েছিল।